11 November, 2020

সাদা হাতীর দেশ: থাইল্যান্ড ভ্রমণ (পর্ব - ৩)

(পর্ব-১ এবং ২ লিখেছিলাম এক বছর আগে। ব্যস্ততার কারণে আর লেখা হয়ে উঠেনি। প্যান্ড্যামিকের জন্য অনেক কিছুই হয়তো পরিবর্তন হয়েছে তবুও এই পোস্টের তথ্যগুলো কাজে লাগবে আশা করি।)
ক্রাবি এয়ারপোর্টে বিমান যখন টেক-অন করে তখন রাত প্রায় ১২ টা বাজে। আমরা বেশকিছু ট্যাক্সি দেখলাম ভাড়া অনেক বেশি ছিলো। তবে এটা আমরা আগেই জানতাম তাই এয়ারপোর্টেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। তবে আপনারা যারা রাতে এয়ারপোর্টে থাকতে চান, বাইরের আবহাওয়া যাই হোক শীতের কাপড় অবশ্যই সাথে রাখবেন। ক্রাবি এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যশনাল হলেও খুব ছোট, ঘুরাঘুরির জায়গা তেমন নাই। 

এয়ারপোর্টের বাইরে খাবারের দোকান আছে দুইটা। বিভিন্ন রকমের খাবার কিন্তু সব খাবারেই সম্ভবত কারি পাতা দেওয়া থাকে। এটার ঘ্রাণ আমি সহ্য করতে পারতাম না। এইজন্য বাকি দিন গুলোতে আমি সবচেয়ে বেশি খেয়েছি কফি, জুস এবং বিভিন্ন রকমের ফল। হাতে বেশি সময় থাকলে এই ফ্লাইটে না গেলেই ভালো অথবা গেলেও হোটেলে গিয়ে থাকা উচিৎ। সেক্ষেত্রে আপনি পরেরদিন ফি ফি আইল্যান্ডে যেতে পারেন। কারণ ক্রাবিতেও দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। 

ক্রাবি এয়ারপোর্ট থেকে ক্রাবি শহর প্রর্যন্ত সাটল বাস ভাড়া ৯০ বাথ, শেয়ার জিপে ২০০ বাথ। ক্রাবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা Ao Nang বীচ পর্যন্ত শেয়ার জিপে ২৫০ বাথ এবং বাসে গেলে ১৫০ বাথ। অ-নাং বীচের আশেপাশে কম খরচে ভালো হোটেল এবং খাবার পাওয়া যায়। 

রাতে শীত মশা এবং ক্ষুধায় ঘুম না হওয়ার কারণে বাসে উঠেই সে কি ঘুম! একেবারে টেনে টেনে বাস থেকে নামতে হয়েছিলো তাই আমি পথে কিছুই দেখিনি বলা যায়। বাস থেকে নেমেই হাটাহাটি শুরু করলাম একেবারে শান্ত প্রায় শহরটাতে। দোকানপাট তখনও সব খোলেনি। এরকম সুনসান জায়গা দারুণ লাগে আমার। সেভেন ইলেভেনের শপ থেকে কফি নিয়ে সিঁড়িতে বসে চারিদিক ভালোমতো দেখলাম। ক্রাবি মুসলিম অধ্যুষিত তাই যারা হালাল খাবার নিয়ে টেনশন করেন তারা নির্দ্বিধায় খাওয়া দাওয়া করতে পারেন। এবং ফি ফি আইল্যান্ডে যাওয়ার সময় অবশ্যই ক্রাবি থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবেন। 

ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু বুথ পাওয়া গেলো ফেরী/ইয়টের টিকেট কাটার জন্য। ক্রাবি থেকে ফি ফি আইল্যান্ড যাওয়ার টিকেট পার পারসন ৩৫০ বাথ। তবে Krabi Pier থেকে টিকেট নিলে ৩০০ বাথেও পাওয়া যাবে। আমাদের ফেরী ছাড়ার সময় ছিলো ১টা এবং রিপোর্টিং টাইম ছিলো ১২টা। এই সময়টা মেইন্টেইন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নইলে আপনাকে ফেলে রেখে চলে যাবে যদি একটু দেরি করেন। 

এই সময়টার মধ্যে আমাদের প্ল্যান ছিলো অ-নাং বীচ সহ ক্রাবি শররটা ঘুরে দেখার। আপনি যদি বাইক চালাতে জানেন তাহলে এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্কুটার সবচেয়ে সাশ্রয়ী। ২০০ বাথ দিয়ে সারাদিনের জন্য স্কুটার ভাড়া পাওয়া যাবে। সব জায়গাতেই দরদাম করার সুযোগ আছে তবে এরা আপনাকে ঠকাবে না। দরদাম করলে কমবেশি ৫০ বাথ অব্দি অনার পাবেন। স্কুটার ভাড়ার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স চায় তবে আপনার লাইসেন্স না থাকলেও দেবে কিন্তু সেটা আপনার জন্য রিস্কি হয়ে যাবে হয়তো। স্কুটারের জন্য আপনাকে আরো ৫০ বাথ খরচ করতে হবে তেল/গাসোলিন নিতে। তবে ওখানে ওরা গ্যাস বা গাসোলিন বলে যেটার দাম প্রতি লিটার ৩০ বাথের চেয়ে কিছু কম। ৪০ বাথ লিটার বোতলে করেও অনেক দোকানে বিক্রি করে। এই তেল খুব কম খরচ হয়, দেড় থেকে দুই লিটারে অনেক অনেক মাইল ঘুরাঘুরি করা যায় কারণ তেল একেবারে পিওর থাকে। আর একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বাইক চালাতে পারলে স্কুটার চালানো যায় খুব সহজে তবে চালানোর আগে বেসিক জিনিসগুলো মালিকের কাছ থেকে ভালো করে শিখে নেবেন। 



অনাং যাওয়ার পথে অখ্যাত কিছু স্পট রয়েছে। আরো রয়েছে রাস্তার পাশে খাঁড়া পাহাড়। সম্ভবত পাথুরে পাহাড়। এসব পাহাড়ে ক্লাইম্বিং করা যায়। পথের ভিউ চমৎকার। অনাং বীচে পৌঁছুতে আধা ঘন্টারও কম সময় লাগে। এই জায়গাটা ট্যুরিস্টদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। ক্রাবি শহরের নিস্তব্ধতা এখানে নাই। রাস্তার দু-পাশ ধরেই বিভন্ন ধরনের খাবার এবং বীচে পরার উপযোগী কাপড় চোপড়ের দোকান। 

ক্রাবির বিখ্যাত বীচের মধ্যে রয়েছে এই অ-নাং এবং রেইলে। অনাং বীচে গিয়ে ৫০ বাথে লং টেইল নৌকায় দশ মিনিটে পৌঁছানো যায় রেইলে বীচে। দেখতে খুবই সুন্দর এই বিচ দুটি। 

ক্রাবি নদীর তীরে অবস্থিত ক্রাবি শহর। নদীর তীর ঘেষেই রয়েছে দর্শনীয় Mud Crab Sculpture যেটা কিনা বৃহৎ একটা কাঁকড়ার ভাস্কর্য। অবশ্য নাম শুনেই সেটা বোঝা যায়। এছাড়াও ক্রাবি শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চমৎকার এমারেল্ড পুল! কাছেই আছে গরম পানির ঝর্ণা যেতার প্রবেশ মূল্য ২০০ থাই বাথ। পুল সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে সাটল বাস নেই, স্কুটার বা অন্য কোনোভাবে যেতে হবে। "ফ্লাই এন্ড জাম্প" নামে ক্রাবি শহরে আরেকটা প্রসিদ্ধ সুইমিং পুল আছে। এটাতে এন্ট্রি ফি ৩০০/- বাথ। শহরের কাছেই আছে টাইগার কেভ। ১২’শয়ের অধিক সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উপড়ে উওথলে পুরো ক্রাবি শহরটা দেখতে পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সোনা রঙের বুদ্ধমুর্তি। 

খাবার দাবার সহ প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য *সেভেন ইলেভেন শপ বেছে নিতে পারেন। এরকম আরো কিছু সুপার শপ রয়েছে সেখানে যখন তখন রেডি ফুড পাবেন। প্রয়োজনীয় পোশাক রাস্তার পাশেই পাবেন। দিনে খুব কড়া রোদ পড়ে তাই সাথে সানগ্লাস, হ্যাট এবং আরামদায়ক পোশাক রাখবেন। সানস্ক্রিন ক্রিমও রাখতে পারেন বাড়তি প্রোটেকশন হিসেবে। আমার কাছে কিছুই ছিলো না। ফুকেট আসতে আসতে মুখের ত্বক পুড়ে শেষ। 

ঘুরাঘুরি শেষে স্কুটার জমা দিয়ে টিকেট কাটা বুথে ফিরে গেলাম। পথে এক দোকানের পাশে বসে আয়েস করে কোল্ড ড্রিংস খাচ্ছিলাম। এই আলসেমির কারণে ৮ মিনিট লেট হয়েছিলো। এরমধ্যে আমাদের গাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। পরবর্তী গাড়ি আসার জন্য ৫ মিনিট অপেক্ষা করলাম। বুথের ভদ্রমহিলা ভীষণ আন্তরিক। 

এই সময়টার মধ্যে আমি ঘুরে ঘুরে স্ট্রিট ফুড দেখছিলাম। যাওয়ার আগে সাথে খাবার নিয়ে নিলাম ৪০ বাথ দিয়ে। কেমন যেন ছোট ছোট টুকরা করা বিফ, শব্জি এবং ভাত। তারপর গাড়িতে করে ছুটলাম Krabi Pier অভিমুখে।

04 December, 2019

সাদা হাতীর দেশ: থাইল্যান্ড ভ্রমণ (পর্ব - ২)

মাদাম তুসো জাদুঘর Siam Discovery –তে অবস্থিত। আমরা বিটিএস বা স্কাইট্রেন ধরে যাবো এইজন্য বেজমেন্ট ফ্লোরে নেমে গেলাম। আমাদেরকে যেতে হবে Siam স্টেশনে। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে Siam পর্যন্ত সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তাই আগে আমাদেরকে Phaya Thai স্টেশনে গিয়ে নামতে হবে। Phaya Thai স্টেশনে গিয়ে Siam অভিমুখী ট্রেনে উঠে পড়লাম।
ব্যাংকক পৃথিবীর ব্যস্ততম একটি শহর। প্রতি বছর প্রায় ২০ মিলিয়ন লোক এই শহরটা ভিজিট করে তাই এটি World's Most Visited City হিসেবে পরিচিত। এই কথার প্রমাণ মিলবে এয়ারপোর্টে ঢোকার সাথে সাথেই। ট্রেনে উঠেও স্থানীয়দের বদলে বিদেশিই বেশি চোখে পড়ে। অবশ্য আমার চোখে সবাই এখন বিদেশি। কি সুন্দর মানুষ! এমন বড় এবং ব্যাস্ত শহরটার ট্রাফিক সিস্টেম কত চমৎকার। উপর থেকে ঘরবাড়ী গুলোও খুব সাজানো গোছানো দেখা যায়। আমার সবচেয়ে চোখে বাধে রাস্তাঘাট এবং ট্রাফিক সিস্টেম। সুন্দর রাস্তা দেখলে আমি আপ্লুত হয়ে যাই। আমাদের হাতীর ঝিলের রোডটাতেও এক রকম প্রশান্তি লাগে কারণ এত এত ভাঙাচুরা রাস্তার ভিড়ে হাতীর ঝিল এখনো সুন্দর আছে। তাই স্কাইট্রেনে চড়ে আমি কেবল রাস্তাঘাটই দেখছিলাম।
Phaya Thai নেমে ট্রেন বদল করে উঠে পরলাম Siam যাওয়ার ট্রেনে। স্টেশনের এক্সিট থেকেই
Siam Paragon চোখে পড়ে। ওটার ভেতর দিয়ে হেটে গেলে Siam Center তারপর Siam Discovery যেটার চতুর্থ তলায় রয়েছে মাদাম তুসো মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে ঢুকতে এক হাজার থাই বাথ লাগে। পার্কিং-এ অবস্থিত সেভেন ইলেভেন শপ থেকে নিয়ে নিলাম একটি ডিট্যাক (DTAC) সিম। এই সিম থাকলে এন্ট্রি টিকেটে ৩০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। তবে আগেই অনলাইনে ক্লুকে বুকিং দিলেও এই ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে।
মাদাম তুসো জাদুঘরে রয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত সব মানূষের মোমের মূর্তি। লন্ডনের মূল মাদাম তুসো মিউজিয়ামের একটি শাখা হল ব্যাংককের মাদাম তুসো মিউজিয়াম। আমার ধারণা অনুযায়ী দক্ষিন এশিয়া বা এশিয়া অঞ্চলে বেশি জনপ্রিয় এবং আলোচিত মানুষেরা প্রাধ্যান্য পেয়েছে ব্যাংককের এই জাদুঘরে। এমনকি বাহুবলি সিনেমার প্রভাসের একটি মূর্তিও শোভা পাচ্ছে এই মাদাম তুসোতে। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস তারকাসহ জনপ্রিয় সব ক্রীড়া তারকা, হলিউড বলিউডের হিরো হিরোইন, গায়ক গায়িকা, বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী অনেকের মূর্তিই আকর্ষণীয় করে তুলেছে জাদুঘরটিকে। এখানে ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করা যাবে। এন্ট্রি টিকেট দিয়েই দশ মিনিটের চমৎকার 4D মুভিও ফ্রিতে দেখতে পারবেন।
সিয়ামের যে তিনটি সারি সারি বিল্ডিং এখানে রয়েছে সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন। মনোমুগ্ধকর ডেকোরেশন। থাইল্যান্ডের সর্বত্র ঐতিহ্যবাহী থাই শিল্পের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে থাইদের নীতিই হয়তো আর্ট দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করা। কেননা থাই জিডিপির বড় একটা অংশ এই পর্যটন খাত থেকে আসে।
মিউজিয়ামে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে সাতটা বাজলে দৌড় দিলাম ডন মুইয়াং এয়ারপোর্ট। তবে সিয়াম থেকে সরাসরি ডন মুইয়াং পর্যন্ত বাস বা ট্রেন নেই। এখান থেকে ডন মুইয়াং যাওয়ার জন্য MBK
বাসস্টপে আসতে হয়েছে। এই স্টপেজ থেকে দুইটা বাস ডন মুইয়াং যায়। একটা হলো ২৯ নাম্বার বাস। আরেকটা নাম্বার মনে নেই, কেউ সাজেস্টও করেনি কিন্তু সাইনবোর্ডে দেওয়া আছে।
ডন মুইয়াং পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি যদিও আমরা ব্যাংককের ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে বেশ ভয়ে ছিলাম। থাই লোকজন ইংরেজি কেউ কম জানে কেউ জানেই না এই চক্করে পড়ে বাসস্টপ খুঁজে পেতে দেরি হয়েছে। সামান্য ভুল ইনফরমেশনের কারনে সিম কেনার আগে আমাদের ১ ঘন্টা নষ্ট হয়েছে। গুগল লোকেশন বলতে পারলেও কোথায় কি আছে সেটা স্থানীয়রা ভালো বলতে পারে। থাই লোকেরা তথ্য দেওয়ার বেলায় খুবই আন্তরিক। একজন ইংরেজি না বুঝলে অন্যজনকে ডেকে আনে। তবে বাসে চলাচল করার ক্ষেত্রে বাস নাম্বার জানা থাকা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।
রাতেরবেলা বলেই কিনা জানিনা ডন মুইয়াং এয়ারপোর্ট সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টের চেয়েও বড় এবং সুন্দর মনে হচ্ছিলো। বোর্ডিং-এর আগ অব্দি শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিলাম। দৌড়াদৌড়ি করে পা তখন ব্যথা। আপনারা যারা খুব বেশি হাটাহাটি করে ঘুরতে চান তাদের জন্য আবশ্যকীয়ভাবে ফুট ম্যাসেজ নেওয়ার অনুরোধ থাকলো। ঢাকার মতো হাটতে মন না চাইলেই রিকশা সিএনজি মিলবে না। ছোট্ট যে যানবাহন টুকটু্ক আছে ওটার ভাড়া শুনলে বাজেট ট্রাভেলারদের মাথা ঘুরবে। সময় বাচাতে যদিও একবার চড়তে হয়েছে আমাদের। আর রাইড শেয়ার টুরিস্টের জন্য কেমন এটা আমার জানা নেই।
এয়ারপোর্টে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাত পার করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি একটা পরামর্শ দিতে চাই। দীর্ঘক্ষণ এয়ারপোর্টে থাকার প্রয়োজন হলে অবশ্যই শীতের কাপড় সাথে রাখবেন। থাইল্যান্ডের গরম আবহাওয়ায় দরকার নেই ভেবে আমি অবশেষে শাড়ী জড়িয়ে শুয়েছিলাম। কারণ এয়ারপোর্টের তাপমাত্রা খুবই কম থাকে, শীত প্রধান দেশ থেকে হুট করে এসেই কেউ যেনো গরমে না পড়ে।
দৌড়ের উপর থাকার কারণে আমাদের খাওয়া বাদ পড়েছে। আপনারা খাওয়াটাকে একটু গুরুত্ব দেবেন। এয়ারপোর্টে যাওয়ার আগে বাইরে থেকে খাবার কিনে নেবেন। আমাদের এখনকার ফ্লাইটের সাথে খাবার নেই।
সাড়ে নয়টার দিকে বোর্ডিং পাস নেওয়ার ঢাক পড়ে। আমি এতক্ষণ চোখ পিট পিট করে সুন্দর সুন্দর মানুষ দেখছিলাম। তাদের কথা শুনছিলাম যদিও কিছু বুঝিনা। ডাক শুনে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। বর্ডিং পাস নেওয়ার সময় মেয়েটা বিশেষভাবে আমাকে ধন্যবাদ দিলো কেনো আমি জানিনা। উত্তর দেওয়ার ভারটা সঙ্গীর উপর ছেড়ে এগিয়ে গেলাম। সত্যি বলতে এত সুন্দর ছেলেমেয়ে আমি আগে কখনো দেখিনি। শুনতাম ইউরোপিয়ানদের কেবল চামড়া সাদা হয় কিন্তু তারা সুন্দর হয় না। এই কথা একেবারেই মিথ্যে মনে হলো আর তাদের আন্তরিকতা দেখে কেবলই মুগ্ধ হয়েছি। এখানে সাদা আর কালোর ভেদ নাই, আমরা সবাই ট্যুরিস্ট। এমন এখখানা ভাব থাকে সবার।
Air Asia –র এই ফ্লাইটে সাউথ এশিয়ার কেউ নাই। আমরা দুজন মাত্র বাংলাদেশি। থাই বা কোরিয়ানও রেসের মানুষও হাতে গোনা। আমি যেহেতু একেবারে শেষের দিকে বসেছি তাই যাওয়ার সময় সবাইকে দেখেছি। এক ট্রাভেলার ভাই জানালো সেও ক্রাবি যাওয়ার সময় এটা নোটিস করেছে।
বিমান টেক অফ করছে নিচে আলোক ঝলমলে ব্যাংকক শহর। একটা শহর কতটা উন্নত সেটা নাকি রাতের আলো দেখেই বোঝা যায়। এত সুন্দর সাজানো আলো আমি দিল্লি কলকাতাতেও দেখিনি। দুনিয়ায় না জানি আরো কত সুন্দর জিনিস দেখা বাকী আছে...
------
*পরের পর্বে থাকবে ক্রাবি শহর, অনাং বিচ এবং ফি ফি আইল্যান্ডের ট্রান্সপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত।
*সুবর্ণভূমি থেকে কোথায় কিভাবে যাবেন সেটা নিয়ে আমার ছোট্ট গাইডলাইন।
(উল্লেখ্য, আমি কোনো ট্রাভেল বা টিকেট এজেন্সি নই, সাধারন ট্রাভেলার হিসেবে আমার জানাশোনার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবেই। আমার অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন দেশি বিদেশি ব্লগ/ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যগুলোই আমি শেয়ার করবো যেটা আমার কাজে লেগেছিলো। সস্তায় ঘুরুন, সস্তায় টিকেট এরকম বিজ্ঞাপন দিতে আসিনি আমি। আপনি আমার চেয়ে ভালো তথ্য জেনে থাকলে রেফারেন্সসহ শেয়ার করবেন কিন্তু খোঁচা দিয়ে কমেন্ট করবেন না, তাতে আমার মতো সাধারণ ট্রাভেলার বিভ্রান্ত হবে।)
#সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট-এ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সবই পাওয়া যাবে ফার্স্ট ফ্লোর থেকে। তবে স্কাইট্রেনে যেতে চাইলে আপনাকে বেজমেন্ট ফ্লোরে নামতে হবে। সবচেয়ে সস্তায় এবং দ্রুত যেতে চাইলে ট্রেনই বেস্ট।
#সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাংককেই থাকতে চাইলে চলে যাবেন সুখুম্ভিত এরিয়ায় যেখানে বেশীরভাগ বাঙালী থাকে। সুখুম্ভিত যেতে হলে আপনাকে বাস কিংবা বিটিএস স্কাই ট্রেন কিংবা ট্যাক্সি ধরতে হবে। এয়ারপোর্ট বাস ভাড়া প্রায় ২০০ বাথ, ট্রেনে ভাড়া ৫০ বাথ এবং ট্যাক্সি নিতে চাইলে ভাড়া পড়বে ৩০০-৪০০ বাথ।
#ব্যাকপ্যাকারদের জন্য সেরা জায়গা খাওসান রোড যেতে ধরতে হবে শাটল বাস। ভাড়া পড়বে ৬০ বাথ। অথবা বিটিএস স্কাইট্রেনে ৪৫ বাথ দিয়ে ফায়া থাই যেতে হবে আগে। এরপর ৫৯ নাম্বার বাসে করে চলে যাবেন খাও সান রোড। ভাড়া পড়বে ১০-৩০ বাথ। বেশি আরামে যেতে চাইলে খরচ পড়বে এক্টু বেশী, যেতে হবে ট্যাক্সিতে করে। ভাড়া পড়বে ৩০০-৪০০ বাথ।
#ফুকেট কিংবা ক্রাবি যেতে চাইলে বাস পাবেন ফুকেট বাস টার্মিনা্ল ২ থেকে। ভাড়া পড়বে ৭০০-১০০০ থাই বাথ। ফুকেট কিংবা ক্রাবিতে এয়ারে যাওয়া বেস্ট। সেক্ষেত্রে আগেই টিকেট কেটে রাখলে খরচ পড়বে বাসের চেয়েও কম।
#সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে ডন মুইয়াং এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য রয়েছে ফ্রি শাটল বাস। বাসটি প্রথম তলার চার নাম্বার ডোর থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়াও অন্য বাসে যপ্যা যাবে, ভাড়া পড়বে ৩০ বাথ। চাইলে স্কাইট্রেইনে করেও এয়ারপোর্ট যাওয়া যাবে। এইজন্য ৪৫ বাথ দিয়ে আগে ফায়া থাই যেতে হবে এরপর মো চিট গিয়ে বাস ধরতে হবে। অথবা ফায়া থাই থেকেই ১৫০ বাথ বাস ভাড়া দিয়ে ডন মুইয়াং যাওয়া যাবে। আরো বেশি কমফোর্ট জার্নির জন্য রয়েছে পেইড এয়ারপোর্ট বাস সার্ভিস। দ্রুত যেতে চাইলে নিয়ে নিতে পারেন ট্যাক্সি সেক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে ৪৫০ বাথ ।
#সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে পাতায়া যাওয়ার জন্য বেস্ট অপশন হলো এয়ারপোর্ট টু পাতায়া বাস সার্ভিস। ওয়ান ওয়ে টিকেটের জন্য খরচ পড়বে ১২০ থাই বাথ। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টের গেট ৮ থেকে বাস ছেড়ে যাবে। এরপর নর্থ পাতায়া রোডের পাতায়া স্টেশনে নামিয়ে দেবে। ট্যাক্সি নিয়ে গেলে খরচ হবে ১১০০ বাথ।
#সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে মাদাম তুসো মিউজিয়ামে যেতে চাইলে স্কাইট্রেনে করে আপনাকে প্রথমে Phaya Thai স্টেশনে গিয়ে নামতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪৫ থাই বাথ। এরপর Siam স্টেশনে যাওয়ার জন্য আলাদা ট্রেন ধরতে হবে। এখানে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২৫ থাই বাথ। Siam স্টেশনে নেমে হেটে হেটে Siam Paragon এবং Siam Center পার হলেই পেয়ে যাবেন Siam Discovery যেটার চতুর্থ তলায় রয়েছে মাদাম তুসো মিউজিয়াম।

02 December, 2019

সাদা হাতীর দেশ: থাইল্যান্ড ভ্রমণ (পর্ব - ১)

প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড ঘুরতে যাচ্ছি আনন্দ তাই একটু বেশিই। খুশিতে যাওয়ার আগের রাতে ঘুমাতেও পারিনি। এটা আমার সেকেন্ড ওভারসিস ট্যুর। তাছাড়া আমি প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দেখতে যাচ্ছি। কলকাতা, দিল্লি এবং শ্রীনগর এয়ারপোর্ট দেখার পর নিজের দেশের এয়ারপোর্ট দেখে আমি একেবারে হতাশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার পর এই হতাশা আরো বেড়েছে। বিমান টেক-অফ করার আগে রানওয়ে থেকেই আমার গা গুলাচ্ছিলো। রানওয়েতে এরকম ঝাঁকুনী! একটা দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে যেই এয়ারপোর্ট সেটারই এই অবস্থা! ইমিগ্রেশনের কাহিনী না হয় বাদই দিলাম। (এসব বলে যদিও লাভ নাই তবুও বলি কোনো একদিন যদি কর্তা ব্যক্তিদের বোধোদয় হয়!)
যাইহোক, সব বিবেচনায় Us Bangla Airlines-এর রিটার্ন টিকেট কেটেছি ১৪৯০০ টাকা করে। পনেরো দিন আগে টিকেট কাটলেই ইউএস বাংলার এই প্রাইসটা পাওয়া যাবে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারীতে এই রেটে পেতে হলে ১ মাস আগে টিকেট করতে হবে। যদিও Thai Lion Air ব্যাকপ্যাকারদের জন্য জনপ্রিয় কিন্তু তখন কোনো অফার ছিলো না এবং একমাস আগেও সর্বনিম্ন রেট পাওয়া যাচ্ছিলো না। আবার লাগেজ নিলে সব মিলিয়ে সেই ১৪০০০ এর বেশিই খরচ পড়ে যায়। যেহেতু আমরা বাজেট ট্রাভেলার তাই ইউ-এস বাংলায় সই। যদিও যাওয়ার সময় আমরা লাগেজ নেইনি কিন্তু ওখান থেকে লাগেজ কিনে আনার প্ল্যান ছিলো। ঢাকা থেকে অন্য বিমানে যাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স নাই আমার তাই সার্ভিসটা অন্যদের তুলনায় কেমন সেটা বলতে পারছি না।
ফ্লাইট ছিলো ৯:৪৫ এ। এয়ারপোর্টে যেহেতু হুট করে লম্বা লাইন শুরু হয় এবং ইমিগ্রেশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝামেলা করে তাই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে যাওয়া উচিৎ। ইমিগ্রেশনে আমার পাসপোর্ট আপডেট না থাকায় ঝামেলা করছিলো। এটা নিয়ে মেজাজ খারাপের একটা পোস্টও দিয়েছি আমি। শেষ পর্যন্ত এই ধকলটা কাটিয়ে বোর্ডিং পাস পেলাম। ইউএস বাংলা নাকি ওদের বিমান অব্দি সবসময়ই বাসে করে নিয়ে যায়। আমি লাফিয়ে যাবো কিনা এটা জিজ্ঞেস করার সময় পাশের ভদ্রমহিলা রসিকতা করে জানালেন, “ইউএস বাংলায় সবসময়ই লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে হয়”।
বিমনটা অত জমকালো না হলেও বেশ বড়সড়। যাওয়ার সময়ে ওদের খাবরটা ভালো লাগেনি কিন্তু আসার সময়ের খাবারটা চমৎকার ছিলো। বিমানে অদ্ভুত চিল্লাপাল্লা না থাকলেও প্রচুর বাংলাদেশি যে আছে এটা বোঝা যাচ্ছিলো। টেক-অফ করার সময় শরীর একটু খারাপ লাগলেও পরে ভালো লাগছিলো। আসলে আকাশভ্রমণ বেশ চমৎকার ব্যাপার যদিও আমার একটু পর থেকেই শুধু ঘুম পায়।
থাইল্যান্ড সময় ১.১০ মিনিটে বিমান টেক-অন করার সময়। সুবর্ণভূমি ল্যান্ড করার পরেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। নতুন কোন দেশ দেখাটা আমার কাছে খুবই এক্সাইটিং। রানওয়ের সেই বাজে ঝাকুনিও ছিলো না। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট দেখতে খুবই ভালো লাগছিলো। অবশ্য পরে মনে হয়েছে ডন মুইয়াং এয়ারপোর্ট বেশি সুন্দর। ইমিগ্রেশন নিয়ে আমি বরাবরই একটু উদ্বিগ্ন থাকি কারণ আমার অভিজ্ঞতা খুবই কম। কিন্তু থাই ইমিগ্রেশন খুবই দ্রুত শেষ হয়েছে এবং আমাকে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। অবশ্য আশেপাশের কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করতে দেখলাম না।
আমাদের নেক্সট ফ্লাইট ছিলো ডন মুইয়াং থেকে ক্রাবি। যেহেতু রাত সাড়ে দশটায় ফ্লাইট তাই এই সময়টা আমরা কাজে লাগাতে চাইলাম। সোজা চললাম মাদাম তুসো জাদুঘর অভিমুখে...
----------
*পরের পর্বে থাকবে সুবর্ণভুমি থেকে কোথায় কিভাবে যেতে হবে।
*এয়ার ফেয়ার সংক্রান্ত তথ্যগুলো খুঁজে খুঁজে যা পেয়েছি নিচে তা তুলে ধরলাম।
=> Biman Bangladesh Airlines –এ তিন মাস আগে টিকেট করলে ফেয়ার হবে ২৩০০০ টাকা এবং এক মাস আগে সেটা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৩০০০ টাকায়। এই ফেয়ারের সাথে খাবার ইনক্লুড থাকবে।
=>Us Bangla Airlines –এ পনেরো দিন আগে টিকেট করলেই ১৪০০০ টাকায় পাওয়া যাবে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারীতে এই রেটে পেতে হলে ১ মাস আগে টিকেট করতে হবে। এই ফেয়ারের সাথে খাবার ইনক্লুড থাকবে।
=>Thai Lion Air ঢাকা থেকে সরাসরি ব্যাংককের অন্য এয়ারপোর্ট ডন মুইয়াং যায় শুধু। যারা ক্রাবি বা ফুকেট যেতে চান তাদের জন্য Thai Lion বেস্ট চয়েস। দুই মাস আগে রেগুলার টিকেট কাটলে ভাড়া পড়বে ২৩৫০০ টাকার মতো। তবে প্রোমো অফার থাকলে ১২০০০ থেকে ১৩০০০ টাকার মধ্যেও টিকেট পাওয়া যাবে। Thai Lion কিছুদিন পর পরই প্রোমো অফার দিয়ে থাকে। তবে এই ফ্লাইট গুলোতে খাবার ইনক্লুড থাকে না, কিনে খেতে হয়।
=> Thai Airways বলা যায় থাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য একটি রয়্যাল সার্ভিস। দুই মাস আগে টিকেটের ফেয়ার হবে ৩৩০০০ টাকা এবং এক মাস আগে টিকেট কাটলে ফেয়ার ৩৮৫০০ টাকা পড়বে। এই ফেয়ারের সাথে অবশ্যই খাবার ইনক্লুড থাকবে।

***এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট কাটলে ভাড়া সবসময়ই কয়েকশত টাকা কম পড়বে।
*ব্যাগেজ এবং লাগেজ সংক্রান্ত তথ্য।
এয়ারলাইনস গুলোতে ৭ কেজি পর্যন্ত হ্যান্ডব্যাগ নেওয়া যায়। লাগেজের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পলিসি।
=> ইউএস বাংলা যাওয়ার সময় ২০ কেজি এবং আসার সময় ৩৫ কেজি পর্যন্ত এলাও করে।
=> থাই লায়নে লাগেজ নিতে হলে টিকেট করার সময় বা চেক-ইনের সময় লাগেজের জন্য বুকিং দিতে হয়। প্রতি কেজি লাগেজের জন্য ২০০ টাকা করে পে করতে হয়।
=> থাই এয়ারওয়েজ ইকোনমি ক্লাসের জন্য মেক্সিমাম ৩০ কেজি এলাও করে।
=> বাংলাদেশ বিমান ২০ কেজি করে দুইটা লাগেজ নেওয়ার অনুমতি দেয়।

ফি ফি আইল্যান্ড এবং ফুকেট: প্যারাডাইস ইন থাই স্টাইল (ডিসেম্বর-২০১৯)


ক্রাবি থেকে ফিফি আইল্যান্ডে যেতে দুই ঘন্টা ইয়ট জার্নি করা লাগে। আমাদের মাইক্রো বিভিন্ন স্পট থেকে লোকজন নিয়ে Pier মানে যেখান থেকে ইয়ট ছাড়বে সেখানে নিয়ে আসে। আধা ঘন্টা অপেক্ষার পর ফেরী (ইয়ট) নির্ধারিত সময়েই ছাড়ে। ফেরী বলতে আমরা যে ফেরী বুঝি আসলে তা নয়! এই ফেরী মূলত ইয়ট! এর গতি অনেক। ফেরীতে এসি আছে। লাক্সারিয়াস আসন। এর ছাদে উঠে আন্দামান সাগর দেখা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। ছাদে শুয়ে থাকা লোকজন দেখা আরো রোমাঞ্চকর ব্যাপার! তবে রোদের তীব্রতায় আপ্নার রোমাঞ্চ সাগরের পানিতে মিশতে সময় লাগবে না অবশ্য!
ফিফি আইল্যান্ডের কাছাকাছি আসতেই দেখি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! পাহাড় আর নীল পানির মিলনমেলা! ক্রাবির নিস্তব্ধতা শেষে ফিফির কোলাহল ভালোই লাগছিলো! চারপাশে প্রচুর ট্যুরিস্ট। ফিফিতে ল্যান্ড করতে ২০ বাথ লাগে। এই টাকা ফিফি আইল্যান্ড পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যয় হয়।
ফিফি আইল্যান্ডে সবকিছুর দাম চড়া! তাই এইখানে শপিংয়ের চিন্তা বাদ।
আমাদের হোটেল বুকিং দেয়া ছিল বুকিং ডটকম থেকে। নাম "ফিফি ডন চুকিট"! ১২শ বাথ দুজনের নাস্তাসহ। সকালের বুফে নাস্তার জন্যই ১২শ বাথ উসুল হয়ে যায়!এখানকার বেশীরভাগ হোটেলের রুমগুলো গ্রামের ছোট পাকা বাড়ীর মতো আলাদা আলাদা। বিশাল জায়গাজুড়ে আমাদের হোটেলের ঘরগুলো। হোটেলটির সাইটে গিয়ে এর ছবিগুলো যেমন দেখবেন বাস্তবে তেমনই দেখায়। হোটেলের অবস্থান টন সাই বীচ রোডে।
ফিফিতে থাকার জায়গার সাধারণত অভাব হয় না। তবে কমে পেতে চাইলে আগেই বুক করে যাওয়া উচিৎ। এখানকার হোটেল ছাড়া থাইল্যান্ডের আর কোনকিছুই আগে বুকিং দিয়ে যাবেন না। ফিফিতে হোটেলের অবস্থানের উপর নির্ভর করে দাম কম বেশী হয়!
সন্ধ্যায় পুলের কাছে বসে কফি খাচ্ছিলাম। হুট করে আকাশ থেকে পরিচিত এক্টা গুরুম গুরুম আওয়াজ আসে। বাংলাদেশী ঝড়!?!? 🙄🤔 পরে অবাক হয়ে আকাশে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টির পূর্বাভাস। দুনিয়ার সব দেশেই মেঘের আওয়াজ একই হয়, এটা বুঝতে এক্টু সময় লাগে।
ক্যামেরা ভিজে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত রুমে যাই৷ একসময় এশার আজান হয়! রুমের পাশেই বিশাল মসজিদ। ঘন্টাখানেক পরে হালকা বৃষ্টিতেই এবার বের হই দুজনে৷ মসজিদ দেখতে গিয়ে স্থানীয় এক দোকানীর সাথে কথা বলে জানলাম এখানকার ৯০% স্থানীয় লোক মুসলিম!
ফিফি আইল্যান্ডে এসে আমরা ট্যুরিজমের মূল ফ্লেভারটা পেয়েছি। এই আইল্যান্ডে অন্তত দুই রাত থাকা উচিৎ। এখানে " ফুলমুন পার্টি" (Full Moon Party), মানে প্রতি পূর্ণিমা রাতে জমকালো পার্টি হয়। ডেট হিসেব করে পার্টিটা পেয়ে গেলে রাতটা ভুলার কথা না!
ফিফি আইল্যান্ডের পাশেই আছে মায়া বে বীচ (Maya Bay Beach)। বীচের বালুগুলো এখানকার ডুবতে থাকা মেয়েদের মতোই সাদা।
এই বীচে শ্যুটিং করা হয় লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর সিনেমা ''দ্যা বীচ"! বীচের কারণে ছবিটি বিখ্যাত, নাকি ছবিটির কারণে বীচটি বিখ্যাত সেটি তর্কসাপেক্ষ! তবে অসাধারণ এই বীচটি অবশ্যই ঘুরে আসবেন। যেতে ভরসা রাখতে হবে নৌকায়, খরচ ৭-৮শ বাথ। এক নৌকায় ৭/৮ জন জায়গা হবে। এই মায়া বে-তে বোধহয় ইতিহাসের সবচে বেশী সিনেমা আর গানের শ্যুটিং হয়েছে।
স্নোরকেলিং, মানে সুইমিং যন্ত্রপাতি গায়ে দিয়ে পানির নিচে ডুব দিয়ে থাকা ফিফির অন্যতম আকর্ষণ। এবং মজার ব্যাপার। এখানে চাইলে ডাইভ দিতে পারবেন। একেবারে সাগরের গভীরে। ঝাপ দিতেও টাকা লাগবে। এক হাজার বাথ প্রতিজন। সাতার জানা লাগে না! 👍
ফিফি আইল্যান্ড থেকে আরো কিছু আইল্যান্ডে যাওয়া যায়। জেমস বন্ড আর মাংকি আইল্যান্ড তেমনই দুটি স্পট। জেমস বন্ড আইল্যান্ডে জেমস বন্ড সিনেমার সিরিজের নায়ক পিয়ার্স ব্রসনান অথবা তার আগেরজন বান্ধবী নিয়া মধুচন্দ্রিমা করতে গিয়েছিল। আর মাংকি আইল্যান্ডে বান্দরের জন্য বিখ্যাত। প্রতিটি আইল্যান্ডে যেতে আলাদা টাকা লাগে। আমরা আর কোথাও যাইনি, সব ভিউ প্রায় একই হবে এবং সময় আর টাকা নেই এইজন্য!
ফিফি রাতের বেলা দ্রুত ঘুমায়। রাত ১২ টার মধ্যেই সব ঠান্ডা। কিন্তু তার আগ অব্ধি বীচ ঘেষে প্রতিটি বারে চলে হার্ড গান আর মাস্তি। এসব বারের মূল উদ্দেশ্য ড্রিংক বিক্রি করা। ড্রিংকের গ্রাহক খুজতে এরা ভাড়া করা শিল্পী দিয়ে বিভিন্ন কসরত দেখায়। এসব শো'গুলো চমৎকার! উন্মুক্ত থাকায় আমরা ফ্রি'তে সব দেখছি। এমনকি ওদের সাথে নাচলে ককটেলও ফ্রি দিচ্ছে! 🍷🍾
লং বীচ নামক এই জায়গাজুড়েই ফিফির সমস্ত বার আর যাবতীয় আয়োজন।
ফিফিতে ব্যাংকক, ফুকেট কিংবা পাতায়ার মতো কুকর্মের আয়োজন দেখি নি! তবে পা আর বডি মাসাজ করানোর শপ অনেক। খরচ অন্য জায়গার চেয়ে বেশী। তবে আমাদের লজ্জা আরো বেশী! তাই ওদিকে যাইনি কেউ! 😷
পুরো ফিফি জুড়ে আছে প্রচুর ট্যাটু আকার দোকান৷ কমপক্ষে এক হাজার বাথ লাগবে যেকোন ট্যাটু আঁকাতে! পেইনফুল এই ট্যাটু আকার উপকরণ বাশ আর স্টেইনলেস স্টিল। রাতে বেশকিছু শপের সাম্নে দাড়িয়ে ট্যাটু আঁকা দেখলাম, ভিডিও করলাম।
ফিফিতে স্টারবাক্স, ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, সেভেন এলিভেন, ফ্যামিলি মার্ট সবই আছে। এসব দোকানে খাবারের দাম কম মনে হয়েছে। তবে যথারীতি খাবারের ওই গন্ধটার জন্য আয়েশ করে খেতে পারিনি।
আমাদের হোটেলের এক্টা পুল ছিল। সমুদ্রের গা ঘেঁষে। ওটাতে গা ডুবিয়ে পাহাড় আর সমুদ্র দেখা যায়। ছোট্ট এই পুলে আমি কাপড় খুলে নামতে গিয়ে খুব অস্বস্তি লাগছে সাদা চামড়ার মেয়েরা আমার লাল আন্ডারওয়্যারের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকায়! লজ্জা ভেঙে পুলে নেমে কিছুক্ষণ ভাব নিলাম। ধীরে ধীরে ইউরোপীয় এক্টা মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কইত্থেকে আসছো?
- জার্মানি। তোমরা?
- বাংলাদেশ।
- ও। ইন্ডিয়ার কাছেই, তাই না?
-হুম।
মেয়েটার বফ কিংবা বর ওর কথা শুনছিলো আর পিটপিট করে দেখছিলো আমাদের। বিকিনি পরা এক্টা এঞ্জেল এতো কাছাকাছি এসে দাড়িয়েছে! আমার ভীষণ লজ্জা লাগছিলো আরকি! 😑 সবমিলিয়ে সবাই ট্যুরিস্ট হওয়ায় সবাই সবার প্রতি ফ্রেন্ডলি আচরণ করছে। আমরা দেশে দেশীয়দের রূঢ় আচরণ পেয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় এই পরিবেশকে সিম্পলি স্বর্গ মনে হইছে।
ফিফি আইল্যান্ডে এক্টা ভিউ পয়েন্ট আছে যেখান থেকে পুরো আইল্যান্ড পাখির চোখে দেখা যায়৷ আমরা অর্ধেক উঠে আর শক্তি পাই নাই৷ তবে পাখির চোখে ঠিকই দেখতে পাইছি! 🧐
আইল্যান্ড নিরাপদ। তবুও ফ্রেন্ডলি ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে, হাসপাতাল রয়েছে। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপে কোন গাড়ী নেই। অল্পকিছু এম্বুলেন্স আর পুলিশের বাইক আছে।
পুরো ফিফিতে ২৪ ঘন্টারও বেশী সময় থেকেও একজনও বাঙালী চোখে পড়ে নি৷ অল্পকিছু ইন্ডিয়ান ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনও দেখিনি৷ এসব দেশের লোকজনের প্রিয় জায়গা বোধহয় ব্যাংকক আর পাতায়া।
কোথাও ফিরতে গিয়ে খারাপ লাগছে এমন জায়গার তালিকা করলে ফিফি আইল্যান্ড এক নাম্বারে থাকবে। কোলাহল কিংবা নিরিবিলি পরিবেশ, যেমনটা চান তেমনই থাকতে পারবেন এখানে। বিরক্তিকর মানুষ কখনো ট্যুরিস্ট হয় না। এখানে কোন বিরক্তিকর মানুষ নেই। কারণ ফিফি পিউর ট্যুরিস্ট স্পট।
পরদিন বেলা ২ টায় আমাদের ফুকেটের ফেরী (ইয়ট)।
ফেরীতে উঠে ফিফির অন্যরকম চেহারা দেখে আবারো অভিভূত! দুই ঘন্টা লাগবে ফুকেট যেতে।
সময় কাটাতে ছাদে উঠে অপ্রত্যাশিতভাবে এক ইন্ডিয়ান কাপল দেখলাম। বয়স ৪০-৫০ এর মধ্যে হবে। আমাদের দেখে হিন্দীতে বললো, কৈ থেকে আসছেন?
আমি বিরক্ত হয়ে ইংরেজীতে বললাম, উইয়ার ফম বাংলাদেশ।
এরপর টুকটাক কথা বলে বিরক্তি প্রায় প্রকাশ করেই দিচ্ছিলাম। ওরা বুঝতে পেরে একটু দূরে গিয়ে ফটোসেশন শুরু করলো! আমরা অবাক হয়ে দেখলাম হাফপ্যান্ট পড়া লোকটা ইয়টের পুরো ছাদ খালি থাকা স্বত্ত্বেও ইচ্ছা করে বিকিনি পড়া মেয়েদের একেবারে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে ছবি তুলছে। মেয়েগুলো খুবই বিব্রত হচ্ছে এতে। অথচ লোকটার বউ/গাল্ফেন ইশারায় তাকে আরো ক্লোজ হতে বলছে!
এসব দেখে ছাদে থাকা ত্রিশ চল্লিশের মতো লোক হাসছে আর ইশারায় নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলছে! আমাদেরও ইন্ডিয়ান ভাবতে পারে এই লজ্জায় আমরা দ্রুত ছাদ থেকে নিচে নেমে আসি।
-----
ফুকেটের ঘাটে এসে শুনি ফুকেট শহরে যেতে প্রতিজন ২০০ বাথ লাগবে শেয়ারড জীপে! ট্যাক্সি নিলে ৫০০ বাথ!
রাগ করে হেটেই যাওয়া শুরু করলাম। পার্কিং-এর বাইরে এসে পেছনে ফিরে দেখি দুজন ব্যাকপ্যাকার ললনা। এরাও আমাদের মতোই রাগ করেছে!
দ্রুতপায়ে আমাদের কাছে এসে কি যেন জিজ্ঞেস করলো। না বুঝেই বল্লাম, ফুকেট শহরে যাবো।
সে বললো, তাইলে চলে ট্যাক্সি শেয়ার করি। পরে এক ট্যাক্সি নিলাম মাত্র ৩০০ বাথে! তারমানে ওরা দুজন ১৫০/-, আমরা দুজন ১৫০/-!
ট্যাক্সিতে পাশাপাশি বসে কথা বলতে হয়।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোম্রা কৈ থেকে আসছো?
এক্টা মেয়ে বললো, স্পেন!
আমি খুবই খুশির এক্সপ্রেশন দিয়ে বললাম, ওয়াও! ভেরি গুড রুট!
ওরা হাসলো।
আবার বললাম, স্পেনের কোথায় থাকো?
বললো, কাতালান চেনো?
আমি বললাম, বার্সেলোনা??!?? আমার ফেভারিট দল! (তিন সত্যি)
ওরা দুজন খুব মজা পেলো! হেসে আমাকে বললো, তোমরা?
আমি বললাম, বাংলাদেশ।
অন্যজন বললো, মাইমনসিংহ?
আমি ওর প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে শেষ! বললাম, ওইটার নাম জানো কিভাবে? আমাদের কাছে মইমন্সিংহ তো দুধভাত। আমার বাড়ী চিটাগং। কিন্তু ঢাকায় থাকি৷
এরপরে পাশের মেয়েটা, যেটা বেশী কিউট আরকি; আমাকে বললো, এক্টা সত্যি কথা বলবা?
- বলো!
-তোমরা কি ইন্ডিয়ানদের পছন্দ করো?
-অবশ্যই না। আমরা ওদের ঘৃণা করি। তবে কাশ্মীরিদের ভালোবাসি। ওরা মানুষ হিসেবেও চমৎকার!
-ওহ! তাই নাকি! আমরাও ইন্ডিয়ানদের পছন্দ করি না!
আমরা এরকম অপ্রত্যাশিত আলোচনা করতে করতেই চলে এসেছি ফুকেট শহরে। ওদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আমরা চললাম বাস স্ট্যান্ডে পাতং বীচের উদ্দেশ্যে।
ফুকেট শহর থেকে পাতং বীচে বাস ভাড়া প্রতিজন ৩০ বাথ নিয়েছে। একেবারে বিখ্যাত বাংলা রোডের সামনে নামিয়ে দেয়।
এক্টু ঘুরে আমরা হোটেল নিলাম ৫০০ বাথে। এসি-ফ্রিজ সবই আছে।
রাতেই গেলাম পাতং বীচে। প্রচুর ট্যুরিস্ট। আবহটা ব্যাংককের মতো। বাংলারোড হচ্ছে এখানকার ওয়াকিং স্ট্রিট। রাস্তার দুধারে প্রচুর বার, এসব বারে মেয়েরা শর্ট ড্রেস কিংবা রংবেরঙের অদ্ভুত ড্রেস পড়ে ড্রিংক করার জন্য ডাকছে। কিছু লোক হাতে ছবি নিয়ে প্রাইভেট শো দেখার জন্য রিকুয়েষ্ট করছে। এসব প্রাইভেট এডাল্ট শো মূলত ২৫+ লোকদের জন্য। ফ্রি এন্ট্রি হলেও শুরুতেই বাধ্যতামূলক ড্রিংক কিনতে হয় চড়া দামে।
এই স্ট্রিটের নাম বাংলা রোড হওয়ার কারণ হতে পারে কোলকাতার লোকজন এখানে প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলো! অনেক বার (Bar) দেখলাম ইন্ডিয়ানদের। আমাদের ইন্ডিয়ান ভেবে রাতের খাবার খেতে ডাকছিলো হিন্দীতে।
এই রোড থেকে বের হয়ে উল্টাপাশে যেতেই চোখে পড়লো প্রচুর এরাবিয়ান হালাল ফুডের দোকান। টার্কিশ, মিশরীয় আর ইরানিয়ান ফুডও আছে। এক্টা ট্রাই করতে গিয়ে বেশকিছু টাকা গচ্চা দিয়ে বুঝলাম, ইন্ডিয়ান ডিশ ছাড়া আমাদের চলবে না।
হাটতে হাটতে পা এতো বেশী ব্যথা হয়েছে যে ফুট মাসাজ করাতে বাধ্য হলাম। আধা ঘন্টা ১৩০ বাথ। এখানে ছেলেদের মেয়েরা আর মেয়েদের ছেলেরা মাসাজ করায়! চাইলে রিভার্স করাতে পারেন! কিন্তু "কি দরকার?!?!"
পরদিন সকাল ৮ টায় উঠে হোটেল একেবারে ছেড়ে দিয়ে ২০ বাথে এক্টা চিকেনের ঠ্যাং কামড়াতে কামড়াতে বাইক ভাড়া নিতে গেলাম। সারাদিনের জন্য ২০০ বাথ। রাত ১১ টায় ওদের দিন শেষ হয়।
স্কুটি নেয়ার সময় পাসপোর্ট রাখলো। স্কুটির ছবি আর ভিডিও করতে বললো। আর জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের দেশের গাড়ী কি বামপন্থী নাকি ডানপন্থী?
আমি বললাম, বামপন্থী।
ভদ্রমহিলা খুশি হয়ে বললো, তাইলে তো আর টেনশন নাই!
মহিলার নাম অনেক চেস্টা করেও উচ্চারণ করতে পারিনি। চমৎকার ইংরেজি বলে। এই মহিলা বোধহয় একমাত্র থাই যে ইংরেজিতে ইংরেজি বলে এবং জানে যে পৃথিবীতে ট (T) জাতীয় এক্টা অক্ষর আছে!
ক্রাবিতে যেহেতু স্কুটি চালানোর অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে, দ্রুত পাহাড়ী উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে গুগোলকে সাথে নিয়ে ছুটলাম বিগ বুদ্ধা দেখতে। পাতং থেকে বের হতে এক্টা উঁচু পাহাড় টপকাতে হয় গাড়িগুলোকে। আমার ১২৫ সিসি বাইক নিয়ে দুজনে মিলে ওই পাহাড় টপকাতে কিঞ্চিৎ পা কাপছিলো! সংগীনীকে এইটা বুঝতে দেইনি প্রেস্টিজ কনসার্ন হবে তাই!
কিন্তু স্থানীয়রা পুচকে স্কুটি নিয়ে এতো দ্রুত যাচ্ছিলো যে মনে হচ্ছে আমি সাইকেল চালাচ্ছি। তবে এখানকার রাস্তাঘাট বাংলাদেশের মতো উঁচুনিচু নয়। রাস্তার মাঝখানে ম্যানহোল কিংবা উইমেনহোল কিছুই নেই! অন্যান্য বাইকাররা খুবই ভদ্র। অবশ্য মাথায় হেলমেট নেই অনেকেরই। দীর্ঘ সময়েও আমি কোন হর্ণ শুনতে পাইনি! রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই বললেই চলে। সবাই সিগনাল মেনে চলছে। তবে ফাকা রাস্তায় সিগনাল মানতে আমার এত্তো কষ্ট হইছে যে সেই অপেক্ষার আফসোস এখনো রয়ে গেছে! 😏😑
যাওয়ার পথে "ফুকেট ফ্লোরেস্তা" নামে বিশালাকার এক্টা শপিংমল আছে শহরে। এর নিচতলায় "সি একুরিয়াম" আছে, ৪০০ বাথ লাগে ঢুকতে। যেহেতু একুরিয়াম দেখার অভিজ্ঞতা আছে তাই আর যাইনি ভেতরে। নিচতলা থেকে প্রচুর ড্রিংক কিনে আবারো ছুটলাম বিগ বুদ্ধায়। উল্লেখ্য যে ড্রিংক মানে বিভিন্ন ফ্লেভারের হালাল তরল খাবার! 😄
থাইল্যান্ডের বৃহত্তম বুদ্ধ মুর্তি বোধহয় এটাই। পাহাড়ের একদম চূড়ায়। সুন্দর আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তা৷ বিগ বুদ্ধায় প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে। শহরের বাইরে হওয়ায় স্কুটি না নিয়ে আসলে খরচও পড়বে যথেষ্ট। এখানে এন্ট্রি ফ্রি। তবে উদোম গায়ে যাওয়া যায় না। বেশিরভাগ বিদেশী যেহেতু খালি গায়ে ঘুরে, তাদের জন্য গেটে ফ্রি থাই কাপড়ের ব্যবস্থা আছে। যাওয়ার সময় ফেরত দেয়া লাগে। শহরের বার্ডস আই ভিউ পাওয়ার জন্য এই জায়গাটা এক্টা মাস্ট সি স্পট৷
এখানে পার্কিং-ও ফ্রি!!!
বিগ বুদ্ধা থেকে ফিরতি পথে গেলাম এলিফ্যান্ট কিংডমে। হাতি থাইল্যান্ডের জাতীয় ক্রাশ। এলিফ্যান্ট কিংডমে ৫০০ বাথে করে হাতির পিঠে চড়ে পাহাড়ী পথে ঘুরে আসা যায়। হাতিকে খাবার খাওয়ানো, হাতির সাথে গোসল করা (হাতি শূড় দিয়ে আপ্নাকেও গোসল করিয়ে দেবে), হাতির পিঠে উঠে ছবি তোলা এই টাকার মধ্যে।
ফুকেটে একধরনের রেসিং কার আছে। ২০০ বাথে দশ মিনিটের রাইড৷ রেসিং ট্র্যাকে রেসিং এক্সপেরিয়েন্স নিতে এটাও এক্টা মাস্ট ডু এক্টিভিটি।
থাইল্যান্ডের সব শহরেই বোধহয় টাইগার জু আছে। ফুকেটেও আছে, টাইগার কিংডম। যথারীতি বাঘের সাথে ছবি তোলা, বাঘকে দুধ খাওয়ানো, কোলে নিয়ে রাখা। বাচ্চাদের জন্য এই জায়গাটা বেসম্ভব ভালো।
সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম পাতং বীচের কাছে আমাদের হোটেলে। হোটেল আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম, ব্যাগটা শুধু রিসিপশনে রাখা ছিলো। ওটা নিয়ে ছুটলাম এয়ারপোর্টের জন্য শেয়ারড মাইক্রো'র আসন বুকিং দিতে। প্রতিজন ২০০/- বাথ। ট্যাক্সিতে গেলে ৭০০ বাথ মিনিমাম। বাসে গেলে প্রতিজন ১৫০/- বাথ। তবে লাস্ট
বাস রাত ৮ টায়। লাস্ট শেয়ারড মাইক্রোবাস ৯ টায়।
খাবার খেয়ে নয়টায় মাইক্রো-তে উঠামাত্র শুরু হলো বৃষ্টি! পাহাড়ী রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে জীপে চড়ার অতিপ্রাকৃত আবহটা এখনো মনে রয়ে গেছে!
আমাদের জীপে একজন মদ্যপ আমেরিকান ছিলো! মদ্যপ হলেও লোকটার যে হুশজ্ঞান সবই ছিলো সে এটা প্রথমে বুঝতে দেয়নি। পুরো জীপের ১১ যাত্রীকে ইচ্ছাকৃত কমেডি আচরণ করে হাসিয়ে মেরেছে!
ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে আমরা ফুকেট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এসে নামলাম। এয়ারপোর্ট খুবই গোছানো আর সুন্দর। থাই লায়নের ফ্লাইট পরদিন ভোর ছয়টায় হওয়ায় আমরা ফ্লোরেই ঘুম দিলাম।
এবার আমাদের সহযাত্রীদের বেশীরভাগ স্থানীয়। প্রায় দুই ঘন্টার এই বাজেট এয়ারলাইন্সে খাবার দেয় না। ভাড়া ৩৫০০/- বাংলা টাকা নিয়েছিল প্রতিজনের।
ব্যাংককের ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট থেকেই ফ্রি শাটল বসে চলে এলাম সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফিরতি ফ্লাইট বেলা ২ টায়। বোর্ডিং পাস নিয়ে বোর্ডিং গেটের কাছে গিয়ে হতাশ হয়ে দেখি সবাই বাঙালী! 😑
সেই চির পরিচিত ক্যাওয়াজ! বিমানে উঠেও সবাই চিৎকার চেচামেচি করতেছে। ভিড্যু কল দিয়ে পাশের লোক কামাইল্যার মা'কে বিমানের উড্ডয়ন দেখাইতেছে আর পুরা বিমান কাপায়া কামাইল্যার মা বাংলাদেশ থেকে দোয়া ইউনূস পড়তেছে যেন বিমান ঠিকঠাকমতো উড়তে পারে। ওই ভদ্রলোকের ছেলে ভিডিউতে আইসা বলতেছে, বাবা জানালার কাছে মোবাইল নেও। খেয়াল রাইখো জানালা দিয়া যেন মোবাইল পইড়া না যায়।
এদিকে এয়ারহোস্টেস মাইকে বারবার বলছে "মোবাইল বন্ধ রাখেন সবাই। আপ্নার হ্যান্ড লাগেজ মাথার ক্যাবিনে জায়গা না হলে পায়ের কাছে রাখুন। আর মাথার কেবিনে রাখতে গিয়ে আরেকজনের মাথায় ফেলবেন না! আসন পেয়ে গেলে দ্রুত বসে অন্যকে যাওয়ার সুযোগ দিন।" কে শোনে কার কথা! এক ম্যায়ে আমার পথের সাম্নে দাড়িয়ে আছে প্রায় পাচ মিনিট। আমি সরতে বললে মুখ ভেংচি দিয়ে বললো, ক্ষেত এক্টা!
আমিও আস্তে বললাম, চাষ করবেন?

© KingDH

01 December, 2019

নিঝুম শহর ক্রাবিতে একদিন (ডিসেম্বর-২০১৯)


ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট এতো বড় ভাবি নি। আমার কাছে সুবর্ণভূমির চেয়েও এটা সুন্দর এবং বড় মনে হইছে। আমাদের ফ্লাইট এইবার এয়ার এশিয়ায়। এইটাও এক্টা বাজেট এয়ারলাইনস। ব্যাংকক টু ক্রাবি মাত্র ২৫০০/- টাকা ভাড়া! দূরত্ব ৮৫৬ কিলোমিটার।
এয়ার এশিয়ার এই ফ্লাইটে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে আছি আমরা দুজন। ২২০+ যাত্রীর সবাই সাদা চামড়ার। সম্ভবত ৯০% লোক ইউরোপীয়। মানে এরা সবাই মসিয়ে ফ্রসিয়ে ট্যাব্রাগ্রেল টাইপের শব্দ দিয়ে কথা বলছিলো! তবে মুগ্ধ হয়ে গেছি সবার আচরণ আর সৌজন্যতাবোধে। বাজেট এয়ারলাইনস হওয়ায় কোন খাবার দেয় নি। যদিও অসংখ্য কিউট মানুষ দেখে সেই দুঃখ ভুলে মনে ছিলো না। এয়ার এশিয়ার এই ফ্লাইটটি-ই বোধহয় আমার স্বল্প অভিজ্ঞতার সেরা ফ্লাইট!
ক্রাবি এয়ারপোর্টে নামলাম রাত ১২ টায়। এই সময়টা হোটেলে না গিয়া এয়ারপোর্টেই রোহিঙ্গা স্টাইলে ঘুম দিলাম ফজরের আগ অব্দি। শিডিউল এভাবেই সাজানো ছিলো। কিন্তু এয়ারপোর্টে এসি থাকায় ঠান্ডায় কষ্ট হইছে খুব! 🥴🤕
ক্রাবি এয়ারপোর্ট খুবই ছোট্ট। আমাদের কক্সবাজার এয়ারপোর্টের মতো! এর রানওয়ে উচু থেকে নিচুর দিকে!
ক্ষুধা লাগছে বেশ, কিছু খেতে হবে। এয়ারপোর্টের বাইরে দুইটা খাবারের দোকান আছে। গেটের ডান পাশেই। খাবারের দাম কম হলেও সব খাবারই পিউর থাই! ফলে থাই ফুডের ঐতিহাসিক গন্ধটা নাকে লাগামাত্র অস্বস্তি শুরু হইছে। সেইটা ছিল ইউএস-বাংলার ফিরতি ফ্লাইটে উঠার আগ অব্দি। আমরা ৪০ বাথ করে ৮০ বাথে দুই প্যাকেট চিকেন রাইস নিলাম। মানে মুরগী ভাত আরকি! এরা মুরগীর চামড়া ছিলে না। আমার বমি আটকে কোনমতে খেয়েই জুস আর কফি নিলাম আগে কি খেয়েছি সেটা ভুলতে!
এয়ারপোর্ট থেকে ক্রাবি শহরে যেতে শেয়ারড জীপে লাগে ২০০ বাথ। আর বিখ্যাত অনাং (Ao Nang) বীচে যেতে লাগে ২৫০ বাথ। বাসে গেলে ১৫০ বাথ! বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে অনাং বীচের পাশে গিয়ে থাকা। ওখানকার হোটেল সস্তা। খাবারও ভালো।
ক্রাবি শহরে নেমে মন বিষণ্ণ হয়ে গেলো। বিষন্ন নীরব শহরের প্রভাব! সবকিছু শান্ত। যেন গতকাল রাতে ভয়ানক কোন ঘটনা ঘটে গেছে শহরজুড়ে, কোথাও কেউ নেই। ক্রাবিকে আমি বলবো থাইল্যান্ডের নিঝুম দ্বীপ!
শহরের ছিমছাম গোছানো রাস্তায় হাটতে হাটতে এক্টা বুথে গিয়ে ফিফি আইল্যান্ডে যাওয়ার ফেরীর (আসলে ইয়ট, Yacht) টিকেট বুক করলাম ৩৫০ বাথ দিয়ে। দুজনের জন্য ৭০০ বাথ। ফেরী টাইম ১ টায়, রিপোর্ট টাইম ১২ টায়।
পূর্বপ্ল্যানানুযায়ী স্কুটি ভাড়া নিলাম। স্কুটার সাধারণত ২০০ বাথ (৬০০/- টাকা) হইলে সারাদিনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায়। যেহেতু আমার হাতে ৩ ঘন্টা আছে, সেটা অল্প সময়, এর জন্য ১৫০/- বাথ নিলো বাইকের মালিক, নাম নিক্কি; একজন নিপাট থাই ভদ্রমহিলা। স্কুটি চালাইতে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে, পাসপোর্ট দেখাইলে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দেয়। হেলমেট একজনের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে ওদের নামমাত্র হেলমেটের অসুবিধা হচ্ছে এক্টু জোরসে টান দিলেই বাতাসের সাথে উড়ে যায়!
তেল  নিলাম ৫০ বাথের। তেলকে থাইল্যান্ডে "গ্যাস" কিংবা "গ্যাসোলিন" বলে। পাম্প থেকে নিলে ২৭-২৮ বাথ প্রতি লিটার। আর বোতলে যেকোন দোকান থেকে নিলে ৪০ বাথ! তবে এই তেল/গ্যাসোলিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক লিটারে বহু পথ পাড়ি দেয়া
যায়। সম্ভবত বাংলাদেশের অকটেনে (তেলে) ভেজাল থাকে এইজন্য এই পার্থক্য।
আমি আগে কখনো স্কুটার চালাই নি। কোনটা চাপ দিলে সাম্নে যায়, কোনটা চাপলে পিছে যায় জানা নাই। আল্লাহর উপর ভরসা কইরা সবগুলা সুইচ এক্টা এক্টা চাপ্তে থাকলাম। একসময় স্কুটারও চলতে শুরু করলো। গেলাম অনাং বীচে। শহর থেকে ২২/২৩ কিলোমিটার দূরে। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা ছবির মতো সুন্দর সড়কের দুপাশে দালানের মতো খাড়া পাহাড়! সাথে অসাধারণ পথ আর বীচের ভিউ দেখে স্কুটার চালানোর সময় নিজেদের উত্তম-সূচিত্রা না ভাবার কোন কারণ ছিলো না। এখানকার খাড়া খাড়া পাহাড়ে "রক ক্লাইম্বিং" করে বিদেশীরা! টাকা লাগে এসব করতে!
স্কুটিতে অনাং যেতে আমাদের ২৫ মিনিটের লেগেছে। এখানেও ট্যুরিস্টের ভীড় আছে যথেষ্ট।
অনাং বীচের পাশেই এক্টা বড় মসজিদ রয়েছে। রাস্তার পাশের "স্ট্রিট ফুডের" অনেক দোকানেই "হালাল" লেখা রয়েছে। হালাল লেখা না থাক্লে নিশ্চিত থাকতে পারেন পর্ক (শুয়োর) রয়েছে, একই তেলে হয়তো মুরগী ভেজে রাখছে! থাইল্যান্ডের স্ট্রিট ফুড দুনিয়াবিখ্যাত! দাম, ফ্রেশনেস আর স্বাদের জন্য এই সুনাম। তবে ওদের খাবারে কি এক্টা মশলা/পাতা দেয়। সেটার বিশ্রী গন্ধটা এখনো বাথরুমে গেলে নাকে আসে! 😷😷
ক্রাবি আর অনাং বীচের আশপাশে প্রচুর হিজাব পরিহীতা মেয়ে দেখলাম রাস্তায় কিংবা দোকানে কাজ করছে। আবার কেউ কেউ জাস্ট উদোম গায়ে! শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কতো বেশী পার্থক্য!!
অনাং এবং রেইলে (Ao Nang & Railay) হচ্ছে ক্রাবির উরফে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত বীচের দুইটা। রেইলে বীচ ওয়ার্ল্ড টপ টেন বীচের মধ্যে ৭ম! অনাং বীচে গিয়ে ৫০ বাথে লং টেইল নৌকায় দশ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন রেইলে বীচে। লং টেইল মানে যে নৌকার এক্টা দিকে লম্বা এক্টা অংশ থাকে যার সাম্নে দাড়িয়ে লোকে সেল্ফি তোলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বুঝায় যে সে এখন ক্রাবি কিংবা ফুকেট চলে আসছে।
ক্রাবি শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে এক্টা চমৎকার পন্ড/পুকুর/পুল আছে, নাম এমারেল্ড পুল! সাথেই গরম পানির ঝর্ণা আছে। এইটায় ঢুকতে ২০০ থাই বাথ লাগে। যাইতে হয় স্কুটার ভাড়া কইরা। ডাইরেক্ট কোন লোকাল বাস নাই। পুল সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা। পুলের পানি স্বচ্ছর চেয়েও স্বচ্ছ!
ক্রাবি শহরেই "ফ্লাই এন্ড জাম্প" নামে এক্টা সুইমিং পুল আছে। এটাতেও ঢুকতে ৩০০/- বাথ লাগে। ভালো সাতার জানলে এইটাতে যাওয়া উচিৎ। আমি ভালো সাতার জানি না, খারাপ সাতার জানি। এইজন্য যাই নি। অবশ্য টাকার অভাবে যাইনি বললেও অত্যুক্তি হবে না! 😉
শহরের কাছেই আছে টাইগার কেভ। প্রায় ১২৩২ টি সিড়ি টপকে শীর্ষে উঠলে ক্রাবি শহর চোখের সাম্নে চলে আসবে। বিশালাকৃতির একটা গোল্ডেন বুদ্ধমূর্তিও আছে এখানে।
ক্রাবি শহর ক্রাবি নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর তীর পাকা করা, বেশকিছু স্থাপনাও আছে। চওড়া রাস্তা ধরে স্কুটার চালানোর সময় এসব স্থাপনায় ছবি তুলতে পারেন। মাড ক্রাব স্কাল্পচার তেমনই এক্টি! এখানকার ভিউটাও চমৎকার। এরকম এক্টা জায়গা ঢাকায় থাকলে আমি এখানেই সময় কাটাতাম।
থাই লোকেরা বোধহয় কখনো চিটারি করে না। এরা যতো টাকা নিবে তার বিনিময় অবশ্যই দিবে। কিছুতেই মাত্রাতিরিক্ত রাখে না। যদিও আমাদের মতো দরিদ্র ট্রাভেলারদের জন্য ওইটাই অনেক টাকা!
পুরো ক্রাবি শহরে রাস্তা দেখানোর কাজ করেছে গুগোল! শহর থেকে স্কুটারে অনাং যাওয়া আসার নির্দেশনা গুগলের। এখানকার লোকজন, মানে পুরো থাইল্যান্ডের সাধারণ মানুষ মোটেই ইংরেজি তো জানেই না, সামান্য বাংলাটাও জানে না। এমনও হইছে যে আমি ইংরেজিতে এক্টা কুশ্চেন করছি সে পাল্টা থাই ভাষায় তারমতো সবকিছু বইলা আরামে চোখ বন্ধ করে ফেলছে! অথচ আমি কিছুই বুঝি নাই। তাছাড়া থাই এবং ইংরেজি ভাষার নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমস্যা আছে! যেমন থাই ভাষায় ট (T) নাই, আবার ইংরেজী ভাষায় ত নাই! ফলে থাইল্যান্ডের মানুষ ইংরেজি বলতে গেলে সেটা জাপানিজ হয়ে যায়! 😂
ক্রাবি তথা পুরো থাইল্যান্ডে "সেভেন এলিভেন" এবং "ফ্যামিলি মার্ট" নামে স্বপ্ন/অগোরা/মীনাবাজার টাইপের সুপারশপ আছে সর্বত্র। অনেক্টা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের মতো, ঘরে ঘরে!! এসব শপে দিনের এবং রাতের ব্যবহার্য, আহার্য সব পাবেন, সঅঅঅঅব।
পুরো থাইল্যান্ডে দিনের বেলায় হাবিয়া দোযখ থেকে আগত আগুণের হলকা বইতে থাকে। ফলাফল হিসেবে একদিনেই নিজেরে নিগ্রো, কমপক্ষে পিউর তামিল ভিলেন হিসেবে দেখতে পাইলাম। মাথার উপ্রে এক্টা হ্যাটের অভাব বোধ করলাম। সানগ্লাসেরও! আমি কেন অন্ততঃ সানগ্লাসটি নিয়ে আসি নি সেটা অনেকক্ষণ ভেবেও বুঝতে পারি নি! চেহারার নিগ্রো দশা দেশে ফেরারও এক মাস পর্যন্ত ছিলো।
ব্যাকপ্যাকার হিসেবে দুজনে যাত্রা করেছিলাম! আমি আমার যন্ত্রপাতি ঢাকতে এক্টা আন্ডারওয়্যার নিয়েছিলাম। সেই আন্ডারওয়্যার ঢাকতে আবার এক্টা জিন্স। আর উপরে টিশার্ট! আর কিচ্ছু না! তবে আপ্নাদের কি কি জিনিস নিতে হবে তা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন!?!
অনাং ঘুরে বাইক জমা দিতে গেলাম ক্রাবি শহরে। যেখান থেকে ইয়টের টিকেট বুক করেছি! ওদের টাইম মেইন্টেইনিং বেসম্ভব কড়া! আমার ১২.০৮ বেজে যাওয়ায় নিক্কি ভদ্রমহিলা কপট রাগ দেখিয়ে থাই ইংরেজিতে বলে, ইউর লেত এইত মিনিত। ইউর কার গন। নেক্স কার তেন মিনিত লেতার!
(তর্জমাঃ আপ্নি আট মিনিট দেরী করে এসেছেন। আপ্নার নির্ধারিত গাড়ী চলে গেছে। পরের গাড়ী দশ মিনিট পরে আসবে)
কিন্তু ঠিক পাচ মিনিট পরেই এক্টা এসি মাইক্রো এসে হাজির। আমরা দ্রুত খাবারের প্যাকেট নিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। খাবার ছিল গরু, সব্জী আর ভাত। দাম ৪০ বাথ! হালাল ফুডের দোকান থেকে কেনা।
পুরো ক্রাবি দেখতে আপ্নাকে কমপক্ষে দুই দিন এক রাত থাকতে হবে। আর নিতে হবে স্কুটার ভাড়া। নইলে ট্যাক্সি ভাড়া অনেক পড়বে।

30 November, 2019

রঙিন শহর ব্যাংকক! (নভেম্বর-২০১৯)


ব্যাংককের টিকেট কাটবো ভাবছিলাম থাই লায়ন এয়ারে। এইটা বাজেট এয়ারলাইনস হিসেবে বি-খ্যাত! অফারে মাত্র ১২ হাজারে রিটার্ন! রাত ১ টায় ফ্লাইট! ফিরতি ফ্লাইটও রাতে। আমার মতো গরীব কামলাদের জন্য পারফেক্ট টাইমিং!
কিন্তু এজেন্সি কিঞ্চিৎ ভয় দেখাইলো! কইলো, থাই লায়ন ঠিকঠাকমতো আকাশে উড়তে পারে না। সাথে লাগেজ নিতে দেয় না। মাঝেমধ্যে রাস্তা হারায়া ফালায়। বিমানবালা কাস্টমারের কাছে টাকার বিনিময়ে সার্ভিস দেয়, মানে খাবারদাবার বিক্রি করে! আরো কতো কি!
এজেন্সির বদদোয়ার বদৌলতেই কিনা জানি না, শেষমেশ থাই লায়নের টিকেটের দাম চৌদ্দ হাজার+ হওয়াতে এইটা বাদ্দিয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকেট নিলাম ১৪৯০০/- রিটার্ন। ইউএস-বাংলা'র বেশ কয়েকটা এক্সিডেন্ট সমালোচিত হওয়ার পর ওই এয়ারলাইন্সের টিকেটের দাম প্রায় সবসময়ই কম থাকে। কিন্তু ওভারল সার্ভিস সন্তোষজনক না! 😒
সকাল দশটার বিমান আড়াই ঘন্টার ফ্লাই করবে। থাইল্যান্ড আমাদের চেয়ে এক ঘন্টা এগিয়ে। বেলা দেড়টায় সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে গিয়া থামল আমাদের বিমান। এই এয়ারপোর্টে আমার দ্বিতীয়বার পা ফেলা!
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে ছুটির কাগজ না থাকায় ঝামেলা হইছে। পরে এক পরিচিত এডিসি'রে দিয়া উদ্ধার পাইছি৷ কিন্তু থাই ইমিগ্রেশনে কিছুই বলে নাই।
ট্রাভেলপ্ল্যান অনুযায়ী ব্যাংককেই থাকতে চাইলে চলে যাবেন সুখুম্ভিত এরিয়ায় যেখানে বেশীরভাগ বাঙালী থাকে। যেতে হলে আপনাকে বাস কিংবা বিটিএস স্কাই ট্রেন কিংবা ট্যাক্সি ধরতে হবে। বাস ভাড়া সবচে কম।
এছাড়া ব্যাকপ্যাকারদের জন্য সেরা জায়গা খাওসান রোড যেতে ধরতে হবে শাটল বাস। এক ঘন্টা লাগবে ৩২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে। অথবা যথারীতি বিটিএস স্কাইট্রেন + বাস। আর আরামে যেতে চাইলে খরচ পড়বে এক্টু বেশী, ট্যাক্সিতে করে। সাথে লাগেজ থাকলেও এখানে বাস কিংবা ট্রেনে চড়তে সমস্যা নেই। তবে সতর্ক থাকবেন যেন কারো গায়ে না পড়ে।
ব্যাংককের বাইরে পাতায়া যেতে চাইলে নিচ তলায় গেলেই পাবেন সরাসরি বাস সার্ভিস মাত্র ১২০ থাই বাথে।
এছাড়া ফুকেট কিংবা ক্রাবি যেতে চাইলে প্রথমেই চলে যাবেন ফুকেট বাস টার্মিনাল-২ তে। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৭০০-১০০০ থাই বাথ।
ফুকেট কিংবা ক্রাবিতে এয়ারে যাওয়া বেস্ট। সেক্ষেত্রে আগেই টিকেট কেটে রাখলে খরচ পড়বে বাসের চেয়েও কম। ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট থেকেই বেশীরভাগ এয়ারক্রাফট ছেড়ে যায়। ফ্রি শাটল বাসে এক ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন সুবর্ণভূমি থেকে ডন মুয়াং এয়ারপোর্টে!
ব্যাংককের খাও সান রোডে মাত্র ২০০ বাথেও রুম পাওয়া যায়। শেয়ারড বাথরুম। ব্যাকপ্যাকারদের জন্য এই জায়গাটা আদর্শ।
আমরা একেবারে খাও সান রোডেই রুম নিলাম মাত্র ৫০০ বাথে। ব্যাংককে বাইক ভাড়া পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই লোকাল বাসে চড়তে হচ্ছে। তবে শহরের প্রায় সর্বত্রই বাসে যাওয়া যায়।
এবার ব্যাংকক এসে প্রথমেই দৌড় দিলাম মাদাম তুসো জাদুঘরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে মিটিংটা সাইরা ফেলতে।
এয়ারপোর্ট থেকেই ওদের বিটিএস স্কাই ট্রেনে উঠলাম। স্টেশনের নাম "ফায়া থাই"! প্রতিজনের ভাড়া ৪৫ বাথ, মানে ১৩০/- টাকা। থাই এক বাথ হচ্ছে বাংলাদেশী প্রায় ৩ টাকার সমান! বাংলাদেশ থেকে আসার সময়ই কিছু বাথ নিয়ে আসছিলাম। এবার ফায়া থাই থেকে সিয়াম, ভাড়া ২৫ বাথ। জাদুঘরে ঢুকতে এক হাজার বাথ লাগে। তবে আগেই অনলাইনে ক্লুকে বুকিং কিংবা ডিটাকের সীমের অফার কাজে লাগাইলে ৩০% ডিসকাউন্ট দেয়। অফারটা কাজে লাগাইলাম শপিং মলের নীচ থেকে সীম কিনে নিয়ে। সিয়াম শপিংমল অনেকগুলা। মাদাম তুসোতে যেতে হলে সিয়াম ডিসকভারিতে যেতে হবে। পাশেই দেখবেন সিয়াম প্যারাগন, সিয়াম সেন্টার। ডিসকভারির চার তলায় মাদাম তুসো জাদুঘর। এখানে আছে আইনস্টাইন, মাইকেল জ্যাকসন, প্রিন্সেস ডায়ানা, মাহাথির মোহাম্মদ, ওয়ান ডিরেকশন, ডেভিড ব্যাকহাম, জাস্টিন বিবার সহ অনেকেই।
মাদাম তুসোতে ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করা যায় ইচ্ছামত। এটা এক্টা " মাস্ট ভিজিট" এট্রাকশন। এই টিকেটে এক্টা দশ মিনিটের 4D মুভি ফ্রি দেখতে পারেন, চমৎকার।
পরদিন সকালেই বের হয়ে গেলাম শপিং করতে। উদ্দেশ্য শপিং শেষে বিকেলে ঘুরবো গ্রান্ড প্যালেস মিউজিয়াম, স্কাইভিউ বার আর ওয়াট আরুন।


স্কাইভিউ রেস্টুরেন্ট কিংবা বার ব্যাংককে প্রায় ১০ টি রয়েছে। এসব বারে যেতে সুশীল সেজে যেতে হয়। লুংগী কিংবা আন্ডারগার্মেন্টস এলাউড না। এমনকি স্যান্ডেলও না।
স্কাইভিউ রেস্টুরেন্টে গিয়ে সন্ধার ব্যাংকক দেখা খুবই রোমান্টিক ঘটনা। চারপাশে রঙিন আলো জ্বলার পাশাপাশি ডুবন্ত সূর্যের লালচে আলো মিশে অদ্ভুত এক আবহ তৈরি হয় চারপাশে। এখানকার সর্বোচ্চ স্কাইভিউ রেস্টুরেন্ট ৬৭ তলায়। মিনিমাম ৩৭ তলায়। রুফটপ স্কাই লাউঞ্জ এর মধ্যে এক্টা।
ড্রিংক করার অভ্যাস না থাকলে এসব বারে যাওয়া উচিৎ হবে না।
ওয়াট আরুন ব্যাংককের সবচে বিখ্যাত মন্দির। ব্যাংকক বলতেই আমাদের সামনে যে প্রতিকী ছবিটা ভাসে সেটা এই মন্দিরেরই।
চাও ফ্রায়া (Chao Phraya) নদীর কোল ঘেঁষে এই মন্দির।
নদীর ওপার যেতে ছোট ছোট নৌকা রয়েছে। ভাড়া ১০ বাথ। ওপারে রয়েছে বিখ্যাত গ্র্যান্ড প্যালেস। ঢুকতে ৫০০ বাথ লাগে প্রতিজনের। একসময়ের রাজপ্রাসাদ এই প্লাজা। থাই রাজকীয় ঐতিহ্য জানতে এটা ভিজিট করা যায়। তবে আমরা যাইনি এন্ট্রি ফি বেশী তাই! 😑
চাও ফ্রায়া নদীতে "রিভার ক্রুজ" জার্নি করা যায়। বুফে থাই খাবার আর ব্যাংককের চারপাশ ঘুরিয়ে দেখাতে এই জার্নিটাও চমৎকার। খরচ হবে ১০০০ বাথ প্রতিজন।
ব্যাংকক শহর থেকে প্রায় ৪০কিলোমিটার দূরে রয়েছে সাফারি ওয়ার্ল্ড এবং মেরিন পার্ক। বাসে করে যাওয়া যায়। দুইটাতে একসাথে ঢুকতে লাগবে ১২০০ বাথ। টিকেট কাটতে বিভিন্ন অফার অথবা ক্লুকডটকম ব্যবহার করতে হবে।
ডলফিনের ওয়াটার ডান্স, বিভিন্ন পাখি আর পশুর মজাদার সব কাজকর্ম দেখে মনে হবে সবই আপ্নার টাকা উসুলের জন্যই! ব্যাংককের জন্য এই পার্ক দুটো মাস্ট ভিজিট এট্রাকশন।
ব্যাংককে লোকজন আসে বোধহয় থাই মাসাজ নিতে! শতশত মাসাজ সেন্টার এখানে। ছেলে-মেয়ে সবাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বডি মাসাজ, অয়েল মাসাজ, ফুট মাসাজ, নেক, হেড থেকে শুরু করে এমনকোন অর্গান নাই যেইটার মাসাজ হয় না! খরচ ১৩০ বাথ থেকে শুরু।
ব্যাংককের মূল থাকার জায়গা, মানে দেশীয়রা যেখানে থাকে সেটা হচ্ছে সুখুম্ভিত। এখানেই আছে "নানা ডিস্ট্রিক্ট" (Nana District)। নানা মানে গ্রান্ডপা কিংবা বিবিধ না, একজন থাই বিজনেস টাইকুনের নামে প্রতিষ্ঠিত বিজনেস গ্রুপ। লোকটা ইন্ডিয়ান মুসলিম ছিলো। পরে ব্যবসা আর রাজনীতি করে থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী হয়েছে। নানা ডিস্ট্রিক্টে আছে নানা শপিংমল। পাশেই আছে পৃথিবীর সবচে বড় রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট "নানা প্লাজা"। এর গেটেই উল্লেখ আছে "World's largest adult playground"! প্লাজায় রয়েছে শতাধিক বার। বারে মেয়েরা সেজেগুজে ট্যুরিস্টদের ডাকছে সেবা দিতে! থাই যেসব মেয়েরা এখানে কাজ করে এদের প্রায় কারো চেহারাই সুন্দর না। সম্ভবত এরা খুবই দরিদ্র আর অশিক্ষিত গ্রামের মেয়ে।
পুরো থাইল্যান্ডে আমরা বাসে, ট্রেনে, শপিংমল আর ফুড শপগুলোয় যেসব থাই মেয়ে দেখেছি তারা প্রায় সবাই কিউট। পাতায়া, ফুকেট কিংবা ব্যাংককের এসব বারে কাজ করা মেয়েদের সাথে পথেঘাটে দেখা মেয়েদের চেহারায়, কথায় আর আচরণে আকাশপাতাল পার্থক্য আছে। তবে ভেতরে সবারই এক! 🤐
ব্যাংককের রাস্তায়ও প্রচুর পোকামাকড় পাওয়া যায়। যেখানেই বিদেশি ট্যুরিস্ট...মানে সুখুম্ভিত, খাওসান রোড এরিয়ায় এসব পোকামাকড় বেশী পাওয়া যায়। সন্ধ্যার পরেই এরা আসে। শখের বসে চড়া দামে অনেকেই এগুলো খায় মূলত ফেবু, ইন্সটাগ্রামে ভিডিও/ছবি দেয়ার জন্য। সাপ, বিচ্ছু, চ্যালা, কুমির সবই আছে।
তবে এগুলো কখনোই ট্রাই করবেন না। বিষাক্ত কিংবা পেটে এডজাস্ট না করার কারণে অসুস্থতার অনেক রেকর্ড আছে। আমরা তো দেখেই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম! 😏
ব্যাংককে গেলে টাকা থাকুক বা না থাকুক শপিং মাস্ট! শপিং করার জন্য দুইটা শপিংমল সাজেস্ট করবো। তুলনামূলক কম দামে জিনিসপত্তর কেনার জন্য "প্রাতুনাম" উরফে "প্লাটিনাম" সেরা। বিশাল এই শপিংমল আমাদের দেশের যমুনা ফিউচার পার্কের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ার কথা। একেক ফ্লোরে একেক আইটেম সাজিয়ে বসে আছে মেয়েরা! ওহ, এখানে ছেলে বিক্রেতার সংখ্যা খুবই কম! মেয়েরাই কেনাবেচা করে। এরাও যথারীতি ইংরেজি জানে না। আপ্নি যদি গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, হোয়াটস ইউর নেইম?
সে ক্যালকুলেটর বের দেখাবে দুইশ পঞ্চাশ!
মানে ওর দোকানের প্রোডাক্টসের খুচরা মূল্য!
প্লাটিনাম শপিংমলে একশ থাই বাথে এমনসব আকর্ষণীয় ঘড়ি পাবেন উপহার হিসেবে যা অসাধারণ। এছাড়া ছাতা পাবেন দুইশ বাথে। এগুলো সবই সুভেনিয়্যর হিসেবে অদ্বিতীয়।
এমবিকে (MBK) নামে পায়ে হাটা দূরত্বে আরেক্টা শপিংমল আছে। কোয়ালিটি প্রোডাক্ট এখানে এভেইলেবল, দামও তুলনামূলক কম। প্রাতুনামে পাওয়া যায় না এমন কিছু পাবেন এম্বিকেতে।
তবে ব্যাংককে প্রচুর শপিংমল আছে যেগুলোতে কেনাকাটা করা মধ্যবিত্তদের জন্য প্রায় অসম্ভব!
"সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকক" নামে আরেকটা শপিংমল আছে যেটাতে কেনাকাটা না করলেও শুধুই ঘুরতে যাওয়া উচিৎ। থাইল্যান্ডের সবচে বড় শপিংমল ধরা হয় সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ডকে। এখানে শপিংয়ের পাশাপাশি ফ্রি এবং পেইড রিক্রিয়েশনেরও সব ব্যবস্থা আছে। পুরো মল ঘুরে সব মজা শুষে নিতে কমপক্ষে অর্ধেক দিন বরাদ্দ রাখতে হবে।
তবে সবমিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এলকোহল, মাসাজ আর সিলেক্টেড কিছু কাপড়ের আইটেম ছাড়া সবকিছুর দামই চড়া! কিন্তু "থাইল্যান্ড" নামই এক্টা ব্র্যান্ড, এটাও মাথায় রাখতে হবে! 
শপিং বাদ দিলে ব্যাংককে ঘুরতে দুই দিনে ঢাকা থেকে যাওয়া আসা, সব বেলার খাবার, সব লোকাল ট্রান্সপোর্ট আর ভিসা খরচসহ মোট ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এটা একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত ট্রাভেলারের হিসাব।

29 October, 2019

দিল্লী, তাজমহল ও মাথুরা ভ্রমণ

পেহেলগাম থেকে আমরা শেয়ারিং জীপে জম্মু আসতেছিলাম। দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার প্রায়। আসার সময়ে টের পেয়েছি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কতটা উপরে ছিলাম গত পাঁচদিন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, রাস্তার ধারেই আপেল আর আলুবোখারার গাছ। পাহাড়ের গা বেয়ে পিঁপড়ার মতো ধীরেধীরে নেমে আসা! আগে এসব রাস্তা রিস্কি থাকলেও এখন অনেক নিরাপদ। পথে বেশকিছু টানেল দেখলাম। যখন ভেতরে যায় একেবারে অন্ধকার দেখা যায়। নেহরু টানেল ৯ কিলোমিটার লম্বা। মানে পাহাড়ের বুক ফুটা কইরা চলে গেছে ওইপাশে। এখন অবশ্য পাহাড়ধ্বস হয় খুবই কম। এসব দেখতে দেখতে ৭/৮ ঘন্টা পর যখন জম্মু রেলস্টেশন আসলাম তখন মনে হচ্ছিলো জান্নাত থেকে কোন একটা অপরাধের জন্য আল্লাহ্‌ শাস্তি হিসেবে দুনিয়ায় না পাঠিয়ে ডাইরেক্ট জাহান্নামে পাঠিয়ে দিছেন।
জম্মুর নোংরা রেলস্টেশন, তারচে নোংরা বাথরুম। তাছাড়া কাশ্মীরের নায়ক-নায়িকাদের দেখতে দেখতে চোখ এমন এলিট হইছে যে, জম্মুর প্রায় সব মানুষকেই তেলেগু সিনেমার সাইড ভিলেন লাগতেছিলো।
"শালিমার এক্সপ্রেস"-এ আমরা রাত ৮.৩০ এ রওনা হয়ে দিল্লী পৌছলাম পরদিন সকাল ১০ টায়। এসে আরো বেশী মন খারাপ লাগতেছিলো! তীব্র গরমে মনে হচ্ছিলো হাশরের মাঠে দাঁড়িয়ে আছি। মাথার মাত্র এক হাত উপরে সূর্য। অবশ্য দিল্লী থেকে সূর্যের দূরত্ব এমনিতেও কম। দিল্লী জামে মসজিদের কাছেই হোটেল ওয়েসিসে উঠলাম দুজন। ৯০০/- রূপি ভাড়া। এসি আছে, কিন্তু নষ্ট!
ফ্রেশ হয়ে দিল্লী জামে মসজিদে ঘুরতে গেলাম। বায়তুল মোকাররম টাইপের মসজিদ। এইটাকে ঘিরে মার্কেট। একপাশে প্রচুর খাবারের দোকান। স্ট্রিটফুড হিসেবে ভালোই লাগছে। সবচে ভালো লাগছে জিলাপি আর মিষ্টি। কারো খেতে ইচ্ছে করলে ইনবক্সে নক করবেন, টাকা লাগবে না। গরম গরম জিলাপির ছবি তুলে এনেছি। 
রাতে গেলাম বিখ্যাত দিল্লী গেট!
গিয়ে মন আরো খারাপ হলো। এই গেটের চেয়ে আমাদের বাসার গেট আরো সুন্দর আর বড়। কিন্তু হঠাৎ স্মৃতি ফিরে পাবার মতো "ইন্ডিয়া গেট" নামটা মনে পড়লো। দিল্লী গেট থেকে ৬০ রূপি অটো ভাড়া দিয়ে চললাম ইন্ডিয়া গেট! একেবারে হতাশ না হলেও আহামরি কোন স্থাপনা মনে হয়নি! কিন্তু প্রচুর ট্যুরিস্ট আর রোমান্টিক কাপল।
দিল্লীতে কুতুব মিনার, লোটাস টেম্পল আছে কাছাকাছি দূরত্বে। দিল্লী আর নয়াদিল্লী হচ্ছে পুরান ঢাকা আর গুলশান!
পরদিন আগ্রার একটা প্যাকেজ নিলাম একজন ৪৫০/- রূপি করে। এসি বাস। যাওয়াআসা, সাইট সিয়িং এই টাকার মধ্যে। দিল্লী থেকে আগ্রা ২৫০ কিলোমিটার হিসেবে এই টাকা খুবই কম।
আগ্রা গিয়ে প্রথমেই দেখলাম "আগ্রা ফোর্ট"! এইখানে সম্রাট শাহজাহানের আব্বু থাকতো, পরে শাহজাহান, তারপরে তার ছেলে। এইটা বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের "প্রধান কার্যালয়"ও। ঢুকতে বিদেশীদের জন্য ৫৫০/- রূপি! কিন্তু আমরা যেহেতু দিল্লীর অধীনে তাই নিজেকে বিদেশি না ভাইবা ৪০/- রূপি করে দুজনের ৮০/- রূপি দিয়ে দুটি টিকেট কেটে ঢুকলাম। আগ্রা ফোর্ট থেকে যমুনা নদীর তীরে তাজমহল দেখা যায়। আমাদের সাথে প্রচুর সাদা চামড়ার সত্যিকার বিদেশি ছিলো, তারাই আমার যতো আনন্দের মূল ছিলো। 😎
দুপুরে খাবারের বিরতী!
খাবার ভালো না। তবুও হাসিমুখে খাচ্ছিলাম। জাহান্নামে খাবার পাওয়া গেছে এতেই শুকরিয়া! 
এরপরে গেলাম তাজমহল। এখানেও টিকেট ৫৫০/- রূপি করে। কিন্তু আমি ঢুকলাম ৪০+৪০, দুজনে ৮০/- রূপি দিয়েই। ঢুকার সময় আইডি কার্ড চাইছে। আমি শুদ্ধ জাপানী ভাষায় বলেছি,"ওয়াশি আন্নু নাতাশিমা" "(বংগানুবাদ--আইডি আনি নাই)।" গার্ড কি বুঝেছে কে জানে। বললো, যাঈয়ে! অবশ্য আমিও জানিনা এই কথার মানে! 😜
ভিতরে গিয়ে খুব হতাশ হইছি! ছবিতে তাজমহলকে যতোটা মোহনীয় লাগে বাস্তবে তার ১০%ও সুন্দরী না। তারচে ভালো লাগচতেছিলো কোরিয়ান ওই ট্যুরিস্টদের। সবগুলা কেমন পুতুল পুতুল! চল্লিশ টাকা টিকেটের এইখানেই জাস্ট ৬৯% উসুল হইছে।
হাটতে হাটতে একদম ভেতরে গেলাম। খালি পায়ে যেতে হয়। ভিতরে গিয়ে দেখি একপাশে শাহজাহান আর একপাশে উনার বড় বউ বেগম মমতাজ চুপচাপ শুয়ে আছেন।
তাজমহলের একপাশে বড় একটা মসজিদ। চারপাশে চারটা পিলার আর বিশাল জায়গাজুড়ে বাগান। পিছনে নদী। তাজমহল কিভাবে সপ্তাশ্চর্য হইছে এইটা ভাইবা আমিই অস্টমাশ্চার্য হয়ে ছিলাম। জাস্ট মহামূল্যবান টাইলস (পাথর) ছাড়া ব্যতিক্রম কিছু মনে হয় নাই। আমার টাকা থাকলে আমার সবগুলা প্রেমিকারেই তাদের নিজ জেলায় একটা করে তাজমহল বানায়া দিতাম!
তাজমহল থেকে বের হবার সময় আমরা ওয়েস্ট গেটেই যাচ্ছিলাম যেখানে আমাদের বাস দাঁড়িয়ে। কিন্তু বের হবার সময় এক লোক ইস্ট গেট দেখিয়ে বললো বাস ওইদিকে। আমরা ৬০/- রূপি ভাড়া দিয়ে গিয়ে দেখি বাস ওখানে নেই। ওখান থেকে আবার ওয়েস্ট গেটে আসবো। কিন্তু সব হারামী ড্রাইভার বলে ৬ কিলোমিটার ঘুরে ওখানে যেতে হয়। ভাড়া ১৫০ রূপি। আমরা ভয় পেয়ে গেছি যে তাহলে আমাদের বাস চলে যাবে, কিন্তু বাসে আমাদের লাগেজ, ব্যাগ সব আছে। এখানে এসেই ইন্ডিয়ান মানুষদের আসল চেহারা দেখলাম। সব ফ্রড। ইচ্ছা করে সহজ ১০ মিনিটের রাস্তাটা দেখিয়ে দেয় নি। যাকগে, শেষমেশ শেষমুহুর্তে গিয়ে বাস ধরতে পেরেছিলাম।
তাজমহল ঘুরা শেষে আমাদের রিজার্ভ বাস আমাদের নিয়ে চললো "মাথুরা" জেলায়। আগ্রা থেকে ১৪৫ কিলোমিটার আর দিল্লী থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে মাথুরা। যাওয়ার আগে আমাদের গাইড/সাধু বাসেই দেশীয় "ফেবু আলেম"-দের মতো মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে সেই লেভেলের বক্তৃতা দিলো। বেশকিছু অলৌকিক কাহিনী বইলা আমাদের "ডর"-ও দেখাইলো। একটু পরে বুঝলাম এই মাতা ওহাদের গো-মাতা! 🐄
বাসে বোধহয় আমরা দুজনই মুসলমান ছিলাম। ওদের সাধুর বক্তৃতার মাঝেমাঝে পুরো বাসের সব যাত্রী '"জ্যায় হো" বইলা গলা ফাটায়া চিক্কার দিতো আর সাধু ধমকায়া বলতো "আজকে কিছু খান্নাই নাকি?" আমরা তখন "জয় বাংলা" বইলা চিক্কুর দিয়া রক্ষা পাইছি।
মাথুরা শ্রীকৃষ্ণ'র জন্মস্থান। ভিতরে যাইনি আমরা। খুবই কড়া নিরাপত্তা। জুতা, ঘড়ি, মানিটি কিংবা ভ্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল কিছুই নেয়া যায়না।
সেখান থেকে রাত ১০ টায় গেলাম ''বৃন্দাবনে"! এইখানে নাকি প্রচুর লীলাখেলা হয়। ২২০ কিলোমিটার এই বনের দৈর্ঘ্য। ভিতরে আছে ৫৫০০ মন্দির। মন্দিরের লীলাখেলা রাতের আধারে বেশী হয়। রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি ভর্তি।
রাস্তাঘাটে প্রচুর বেওয়ারিশ গরু! দুই/চাইরটা ধইরা আনার ইচ্ছা ছিলো কুরবানীর জন্য। কিন্তু বিমানের টিকেট কাটা ছিল না বলে আনতে পারি নাই।
এই গরুদের সেবাযত্ন করে গরুর মতোই বেওয়ারিশ লোকজন। তাছাড়া আছে প্রচুর বিধবা, এরাও মায়ের সেবা করে আর দুধ-হিসু-গোবর খেয়ে বাচে।
আমরা এখানকার কিছুই খাইনি। শুনেছি এরা নাকি খাবারে গোমূত্র আর "খাটি গাওয়া গোবর" মিশিয়ে দেয়।
সেখান থেকে দিল্লী ফিরতে ফিরতে রাত ৩ টা। "আশ্রমশালা" নামক একটা জায়গায় বাস নামিয়ে দিলো আমাদের। এখান থেকে দুজনে ২০০ রূপিতে আসলাম দিল্লী এয়ারপোর্ট। আসার পরে অটো ড্রাইভার বলে প্রতিজন ২০০/- রূপি! হারামিটারে ধমক দেয়ার পরে পালাইছে।
দিল্লী থেকে কোলকাতা হয়ে বেনাপোল আসলাম। বর্ডার পার হবার সময় বাংলাদেশি দুজন মিস্কিন পুলিশ দুই হাত পেতে ২০০/- টাকা চাইলো। বিনিময়ে এন্ট্রি সীল এনে দিবে। আমরা "মাফ করবেন, অন্যদিকে দেখেন" বলে নিজেরাই এন্ট্রি নিয়ে ৫ মিনিটেই চলে এলাম বাংলাদেশ!!
জয় বাংলা।