
ক্রাবি থেকে ফিফি আইল্যান্ডে যেতে দুই ঘন্টা ইয়ট জার্নি করা লাগে। আমাদের মাইক্রো বিভিন্ন স্পট থেকে লোকজন নিয়ে Pier মানে যেখান থেকে ইয়ট ছাড়বে সেখানে নিয়ে আসে। আধা ঘন্টা অপেক্ষার পর ফেরী (ইয়ট) নির্ধারিত সময়েই ছাড়ে। ফেরী বলতে আমরা যে ফেরী বুঝি আসলে তা নয়! এই ফেরী মূলত ইয়ট! এর গতি অনেক। ফেরীতে এসি আছে। লাক্সারিয়াস আসন। এর ছাদে উঠে আন্দামান সাগর দেখা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। ছাদে শুয়ে থাকা লোকজন দেখা আরো রোমাঞ্চকর ব্যাপার! তবে রোদের তীব্রতায় আপ্নার রোমাঞ্চ সাগরের পানিতে মিশতে সময় লাগবে না অবশ্য!
ফিফি আইল্যান্ডের কাছাকাছি আসতেই দেখি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! পাহাড় আর নীল পানির মিলনমেলা! ক্রাবির নিস্তব্ধতা শেষে ফিফির কোলাহল ভালোই লাগছিলো! চারপাশে প্রচুর ট্যুরিস্ট। ফিফিতে ল্যান্ড করতে ২০ বাথ লাগে। এই টাকা ফিফি আইল্যান্ড পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যয় হয়।
ফিফি আইল্যান্ডে সবকিছুর দাম চড়া! তাই এইখানে শপিংয়ের চিন্তা বাদ।
আমাদের হোটেল বুকিং দেয়া ছিল বুকিং ডটকম থেকে। নাম "ফিফি ডন চুকিট"! ১২শ বাথ দুজনের নাস্তাসহ। সকালের বুফে নাস্তার জন্যই ১২শ বাথ উসুল হয়ে যায়!এখানকার বেশীরভাগ হোটেলের রুমগুলো গ্রামের ছোট পাকা বাড়ীর মতো আলাদা আলাদা। বিশাল জায়গাজুড়ে আমাদের হোটেলের ঘরগুলো। হোটেলটির সাইটে গিয়ে এর ছবিগুলো যেমন দেখবেন বাস্তবে তেমনই দেখায়। হোটেলের অবস্থান টন সাই বীচ রোডে।
ফিফিতে থাকার জায়গার সাধারণত অভাব হয় না। তবে কমে পেতে চাইলে আগেই বুক করে যাওয়া উচিৎ। এখানকার হোটেল ছাড়া থাইল্যান্ডের আর কোনকিছুই আগে বুকিং দিয়ে যাবেন না। ফিফিতে হোটেলের অবস্থানের উপর নির্ভর করে দাম কম বেশী হয়!
সন্ধ্যায় পুলের কাছে বসে কফি খাচ্ছিলাম। হুট করে আকাশ থেকে পরিচিত এক্টা গুরুম গুরুম আওয়াজ আসে। বাংলাদেশী ঝড়!?!? 🙄🤔 পরে অবাক হয়ে আকাশে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টির পূর্বাভাস। দুনিয়ার সব দেশেই মেঘের আওয়াজ একই হয়, এটা বুঝতে এক্টু সময় লাগে।
ক্যামেরা ভিজে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত রুমে যাই৷ একসময় এশার আজান হয়! রুমের পাশেই বিশাল মসজিদ। ঘন্টাখানেক পরে হালকা বৃষ্টিতেই এবার বের হই দুজনে৷ মসজিদ দেখতে গিয়ে স্থানীয় এক দোকানীর সাথে কথা বলে জানলাম এখানকার ৯০% স্থানীয় লোক মুসলিম!
ফিফি আইল্যান্ডে এসে আমরা ট্যুরিজমের মূল ফ্লেভারটা পেয়েছি। এই আইল্যান্ডে অন্তত দুই রাত থাকা উচিৎ। এখানে " ফুলমুন পার্টি" (Full Moon Party), মানে প্রতি পূর্ণিমা রাতে জমকালো পার্টি হয়। ডেট হিসেব করে পার্টিটা পেয়ে গেলে রাতটা ভুলার কথা না!
ফিফি আইল্যান্ডের পাশেই আছে মায়া বে বীচ (Maya Bay Beach)। বীচের বালুগুলো এখানকার ডুবতে থাকা মেয়েদের মতোই সাদা।
এই বীচে শ্যুটিং করা হয় লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর সিনেমা ''দ্যা বীচ"! বীচের কারণে ছবিটি বিখ্যাত, নাকি ছবিটির কারণে বীচটি বিখ্যাত সেটি তর্কসাপেক্ষ! তবে অসাধারণ এই বীচটি অবশ্যই ঘুরে আসবেন। যেতে ভরসা রাখতে হবে নৌকায়, খরচ ৭-৮শ বাথ। এক নৌকায় ৭/৮ জন জায়গা হবে। এই মায়া বে-তে বোধহয় ইতিহাসের সবচে বেশী সিনেমা আর গানের শ্যুটিং হয়েছে।
স্নোরকেলিং, মানে সুইমিং যন্ত্রপাতি গায়ে দিয়ে পানির নিচে ডুব দিয়ে থাকা ফিফির অন্যতম আকর্ষণ। এবং মজার ব্যাপার। এখানে চাইলে ডাইভ দিতে পারবেন। একেবারে সাগরের গভীরে। ঝাপ দিতেও টাকা লাগবে। এক হাজার বাথ প্রতিজন। সাতার জানা লাগে না! 👍
ফিফি আইল্যান্ড থেকে আরো কিছু আইল্যান্ডে যাওয়া যায়। জেমস বন্ড আর মাংকি আইল্যান্ড তেমনই দুটি স্পট। জেমস বন্ড আইল্যান্ডে জেমস বন্ড সিনেমার সিরিজের নায়ক পিয়ার্স ব্রসনান অথবা তার আগেরজন বান্ধবী নিয়া মধুচন্দ্রিমা করতে গিয়েছিল। আর মাংকি আইল্যান্ডে বান্দরের জন্য বিখ্যাত। প্রতিটি আইল্যান্ডে যেতে আলাদা টাকা লাগে। আমরা আর কোথাও যাইনি, সব ভিউ প্রায় একই হবে এবং সময় আর টাকা নেই এইজন্য!
ফিফি রাতের বেলা দ্রুত ঘুমায়। রাত ১২ টার মধ্যেই সব ঠান্ডা। কিন্তু তার আগ অব্ধি বীচ ঘেষে প্রতিটি বারে চলে হার্ড গান আর মাস্তি। এসব বারের মূল উদ্দেশ্য ড্রিংক বিক্রি করা। ড্রিংকের গ্রাহক খুজতে এরা ভাড়া করা শিল্পী দিয়ে বিভিন্ন কসরত দেখায়। এসব শো'গুলো চমৎকার! উন্মুক্ত থাকায় আমরা ফ্রি'তে সব দেখছি। এমনকি ওদের সাথে নাচলে ককটেলও ফ্রি দিচ্ছে! 🍷🍾
লং বীচ নামক এই জায়গাজুড়েই ফিফির সমস্ত বার আর যাবতীয় আয়োজন।
ফিফিতে ব্যাংকক, ফুকেট কিংবা পাতায়ার মতো কুকর্মের আয়োজন দেখি নি! তবে পা আর বডি মাসাজ করানোর শপ অনেক। খরচ অন্য জায়গার চেয়ে বেশী। তবে আমাদের লজ্জা আরো বেশী! তাই ওদিকে যাইনি কেউ! 😷
পুরো ফিফি জুড়ে আছে প্রচুর ট্যাটু আকার দোকান৷ কমপক্ষে এক হাজার বাথ লাগবে যেকোন ট্যাটু আঁকাতে! পেইনফুল এই ট্যাটু আকার উপকরণ বাশ আর স্টেইনলেস স্টিল। রাতে বেশকিছু শপের সাম্নে দাড়িয়ে ট্যাটু আঁকা দেখলাম, ভিডিও করলাম।
ফিফিতে স্টারবাক্স, ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, সেভেন এলিভেন, ফ্যামিলি মার্ট সবই আছে। এসব দোকানে খাবারের দাম কম মনে হয়েছে। তবে যথারীতি খাবারের ওই গন্ধটার জন্য আয়েশ করে খেতে পারিনি।
আমাদের হোটেলের এক্টা পুল ছিল। সমুদ্রের গা ঘেঁষে। ওটাতে গা ডুবিয়ে পাহাড় আর সমুদ্র দেখা যায়। ছোট্ট এই পুলে আমি কাপড় খুলে নামতে গিয়ে খুব অস্বস্তি লাগছে সাদা চামড়ার মেয়েরা আমার লাল আন্ডারওয়্যারের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকায়! লজ্জা ভেঙে পুলে নেমে কিছুক্ষণ ভাব নিলাম। ধীরে ধীরে ইউরোপীয় এক্টা মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কইত্থেকে আসছো?
- জার্মানি। তোমরা?
- বাংলাদেশ।
- ও। ইন্ডিয়ার কাছেই, তাই না?
-হুম।
মেয়েটার বফ কিংবা বর ওর কথা শুনছিলো আর পিটপিট করে দেখছিলো আমাদের। বিকিনি পরা এক্টা এঞ্জেল এতো কাছাকাছি এসে দাড়িয়েছে! আমার ভীষণ লজ্জা লাগছিলো আরকি! 😑 সবমিলিয়ে সবাই ট্যুরিস্ট হওয়ায় সবাই সবার প্রতি ফ্রেন্ডলি আচরণ করছে। আমরা দেশে দেশীয়দের রূঢ় আচরণ পেয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় এই পরিবেশকে সিম্পলি স্বর্গ মনে হইছে।
ফিফি আইল্যান্ডে এক্টা ভিউ পয়েন্ট আছে যেখান থেকে পুরো আইল্যান্ড পাখির চোখে দেখা যায়৷ আমরা অর্ধেক উঠে আর শক্তি পাই নাই৷ তবে পাখির চোখে ঠিকই দেখতে পাইছি! 🧐
আইল্যান্ড নিরাপদ। তবুও ফ্রেন্ডলি ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে, হাসপাতাল রয়েছে। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপে কোন গাড়ী নেই। অল্পকিছু এম্বুলেন্স আর পুলিশের বাইক আছে।
পুরো ফিফিতে ২৪ ঘন্টারও বেশী সময় থেকেও একজনও বাঙালী চোখে পড়ে নি৷ অল্পকিছু ইন্ডিয়ান ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনও দেখিনি৷ এসব দেশের লোকজনের প্রিয় জায়গা বোধহয় ব্যাংকক আর পাতায়া।
কোথাও ফিরতে গিয়ে খারাপ লাগছে এমন জায়গার তালিকা করলে ফিফি আইল্যান্ড এক নাম্বারে থাকবে। কোলাহল কিংবা নিরিবিলি পরিবেশ, যেমনটা চান তেমনই থাকতে পারবেন এখানে। বিরক্তিকর মানুষ কখনো ট্যুরিস্ট হয় না। এখানে কোন বিরক্তিকর মানুষ নেই। কারণ ফিফি পিউর ট্যুরিস্ট স্পট।
পরদিন বেলা ২ টায় আমাদের ফুকেটের ফেরী (ইয়ট)।
ফেরীতে উঠে ফিফির অন্যরকম চেহারা দেখে আবারো অভিভূত! দুই ঘন্টা লাগবে ফুকেট যেতে।
সময় কাটাতে ছাদে উঠে অপ্রত্যাশিতভাবে এক ইন্ডিয়ান কাপল দেখলাম। বয়স ৪০-৫০ এর মধ্যে হবে। আমাদের দেখে হিন্দীতে বললো, কৈ থেকে আসছেন?
আমি বিরক্ত হয়ে ইংরেজীতে বললাম, উইয়ার ফম বাংলাদেশ।
এরপর টুকটাক কথা বলে বিরক্তি প্রায় প্রকাশ করেই দিচ্ছিলাম। ওরা বুঝতে পেরে একটু দূরে গিয়ে ফটোসেশন শুরু করলো! আমরা অবাক হয়ে দেখলাম হাফপ্যান্ট পড়া লোকটা ইয়টের পুরো ছাদ খালি থাকা স্বত্ত্বেও ইচ্ছা করে বিকিনি পড়া মেয়েদের একেবারে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে ছবি তুলছে। মেয়েগুলো খুবই বিব্রত হচ্ছে এতে। অথচ লোকটার বউ/গাল্ফেন ইশারায় তাকে আরো ক্লোজ হতে বলছে!
এসব দেখে ছাদে থাকা ত্রিশ চল্লিশের মতো লোক হাসছে আর ইশারায় নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলছে! আমাদেরও ইন্ডিয়ান ভাবতে পারে এই লজ্জায় আমরা দ্রুত ছাদ থেকে নিচে নেমে আসি।
-----

ফুকেটের ঘাটে এসে শুনি ফুকেট শহরে যেতে প্রতিজন ২০০ বাথ লাগবে শেয়ারড জীপে! ট্যাক্সি নিলে ৫০০ বাথ!
রাগ করে হেটেই যাওয়া শুরু করলাম। পার্কিং-এর বাইরে এসে পেছনে ফিরে দেখি দুজন ব্যাকপ্যাকার ললনা। এরাও আমাদের মতোই রাগ করেছে!
দ্রুতপায়ে আমাদের কাছে এসে কি যেন জিজ্ঞেস করলো। না বুঝেই বল্লাম, ফুকেট শহরে যাবো।
সে বললো, তাইলে চলে ট্যাক্সি শেয়ার করি। পরে এক ট্যাক্সি নিলাম মাত্র ৩০০ বাথে! তারমানে ওরা দুজন ১৫০/-, আমরা দুজন ১৫০/-!
ট্যাক্সিতে পাশাপাশি বসে কথা বলতে হয়।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোম্রা কৈ থেকে আসছো?
এক্টা মেয়ে বললো, স্পেন!
আমি খুবই খুশির এক্সপ্রেশন দিয়ে বললাম, ওয়াও! ভেরি গুড রুট!
ওরা হাসলো।
আবার বললাম, স্পেনের কোথায় থাকো?
বললো, কাতালান চেনো?
আমি বললাম, বার্সেলোনা??!?? আমার ফেভারিট দল! (তিন সত্যি)
ওরা দুজন খুব মজা পেলো! হেসে আমাকে বললো, তোমরা?
আমি বললাম, বাংলাদেশ।
অন্যজন বললো, মাইমনসিংহ?
আমি ওর প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে শেষ! বললাম, ওইটার নাম জানো কিভাবে? আমাদের কাছে মইমন্সিংহ তো দুধভাত। আমার বাড়ী চিটাগং। কিন্তু ঢাকায় থাকি৷
এরপরে পাশের মেয়েটা, যেটা বেশী কিউট আরকি; আমাকে বললো, এক্টা সত্যি কথা বলবা?
- বলো!
-তোমরা কি ইন্ডিয়ানদের পছন্দ করো?
-অবশ্যই না। আমরা ওদের ঘৃণা করি। তবে কাশ্মীরিদের ভালোবাসি। ওরা মানুষ হিসেবেও চমৎকার!
-ওহ! তাই নাকি! আমরাও ইন্ডিয়ানদের পছন্দ করি না!
আমরা এরকম অপ্রত্যাশিত আলোচনা করতে করতেই চলে এসেছি ফুকেট শহরে। ওদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আমরা চললাম বাস স্ট্যান্ডে পাতং বীচের উদ্দেশ্যে।
ফুকেট শহর থেকে পাতং বীচে বাস ভাড়া প্রতিজন ৩০ বাথ নিয়েছে। একেবারে বিখ্যাত বাংলা রোডের সামনে নামিয়ে দেয়।
এক্টু ঘুরে আমরা হোটেল নিলাম ৫০০ বাথে। এসি-ফ্রিজ সবই আছে।
রাতেই গেলাম পাতং বীচে। প্রচুর ট্যুরিস্ট। আবহটা ব্যাংককের মতো। বাংলারোড হচ্ছে এখানকার ওয়াকিং স্ট্রিট। রাস্তার দুধারে প্রচুর বার, এসব বারে মেয়েরা শর্ট ড্রেস কিংবা রংবেরঙের অদ্ভুত ড্রেস পড়ে ড্রিংক করার জন্য ডাকছে। কিছু লোক হাতে ছবি নিয়ে প্রাইভেট শো দেখার জন্য রিকুয়েষ্ট করছে। এসব প্রাইভেট এডাল্ট শো মূলত ২৫+ লোকদের জন্য। ফ্রি এন্ট্রি হলেও শুরুতেই বাধ্যতামূলক ড্রিংক কিনতে হয় চড়া দামে।
এই স্ট্রিটের নাম বাংলা রোড হওয়ার কারণ হতে পারে কোলকাতার লোকজন এখানে প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলো! অনেক বার (Bar) দেখলাম ইন্ডিয়ানদের। আমাদের ইন্ডিয়ান ভেবে রাতের খাবার খেতে ডাকছিলো হিন্দীতে।
এই রোড থেকে বের হয়ে উল্টাপাশে যেতেই চোখে পড়লো প্রচুর এরাবিয়ান হালাল ফুডের দোকান। টার্কিশ, মিশরীয় আর ইরানিয়ান ফুডও আছে। এক্টা ট্রাই করতে গিয়ে বেশকিছু টাকা গচ্চা দিয়ে বুঝলাম, ইন্ডিয়ান ডিশ ছাড়া আমাদের চলবে না।
হাটতে হাটতে পা এতো বেশী ব্যথা হয়েছে যে ফুট মাসাজ করাতে বাধ্য হলাম। আধা ঘন্টা ১৩০ বাথ। এখানে ছেলেদের মেয়েরা আর মেয়েদের ছেলেরা মাসাজ করায়! চাইলে রিভার্স করাতে পারেন! কিন্তু "কি দরকার?!?!"
পরদিন সকাল ৮ টায় উঠে হোটেল একেবারে ছেড়ে দিয়ে ২০ বাথে এক্টা চিকেনের ঠ্যাং কামড়াতে কামড়াতে বাইক ভাড়া নিতে গেলাম। সারাদিনের জন্য ২০০ বাথ। রাত ১১ টায় ওদের দিন শেষ হয়।
স্কুটি নেয়ার সময় পাসপোর্ট রাখলো। স্কুটির ছবি আর ভিডিও করতে বললো। আর জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের দেশের গাড়ী কি বামপন্থী নাকি ডানপন্থী?
আমি বললাম, বামপন্থী।
ভদ্রমহিলা খুশি হয়ে বললো, তাইলে তো আর টেনশন নাই!
মহিলার নাম অনেক চেস্টা করেও উচ্চারণ করতে পারিনি। চমৎকার ইংরেজি বলে। এই মহিলা বোধহয় একমাত্র থাই যে ইংরেজিতে ইংরেজি বলে এবং জানে যে পৃথিবীতে ট (T) জাতীয় এক্টা অক্ষর আছে!
ক্রাবিতে যেহেতু স্কুটি চালানোর অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে, দ্রুত পাহাড়ী উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে গুগোলকে সাথে নিয়ে ছুটলাম বিগ বুদ্ধা দেখতে। পাতং থেকে বের হতে এক্টা উঁচু পাহাড় টপকাতে হয় গাড়িগুলোকে। আমার ১২৫ সিসি বাইক নিয়ে দুজনে মিলে ওই পাহাড় টপকাতে কিঞ্চিৎ পা কাপছিলো! সংগীনীকে এইটা বুঝতে দেইনি প্রেস্টিজ কনসার্ন হবে তাই!
কিন্তু স্থানীয়রা পুচকে স্কুটি নিয়ে এতো দ্রুত যাচ্ছিলো যে মনে হচ্ছে আমি সাইকেল চালাচ্ছি। তবে এখানকার রাস্তাঘাট বাংলাদেশের মতো উঁচুনিচু নয়। রাস্তার মাঝখানে ম্যানহোল কিংবা উইমেনহোল কিছুই নেই! অন্যান্য বাইকাররা খুবই ভদ্র। অবশ্য মাথায় হেলমেট নেই অনেকেরই। দীর্ঘ সময়েও আমি কোন হর্ণ শুনতে পাইনি! রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই বললেই চলে। সবাই সিগনাল মেনে চলছে। তবে ফাকা রাস্তায় সিগনাল মানতে আমার এত্তো কষ্ট হইছে যে সেই অপেক্ষার আফসোস এখনো রয়ে গেছে! 😏😑
যাওয়ার পথে "ফুকেট ফ্লোরেস্তা" নামে বিশালাকার এক্টা শপিংমল আছে শহরে। এর নিচতলায় "সি একুরিয়াম" আছে, ৪০০ বাথ লাগে ঢুকতে। যেহেতু একুরিয়াম দেখার অভিজ্ঞতা আছে তাই আর যাইনি ভেতরে। নিচতলা থেকে প্রচুর ড্রিংক কিনে আবারো ছুটলাম বিগ বুদ্ধায়। উল্লেখ্য যে ড্রিংক মানে বিভিন্ন ফ্লেভারের হালাল তরল খাবার! 😄
থাইল্যান্ডের বৃহত্তম বুদ্ধ মুর্তি বোধহয় এটাই। পাহাড়ের একদম চূড়ায়। সুন্দর আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তা৷ বিগ বুদ্ধায় প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে। শহরের বাইরে হওয়ায় স্কুটি না নিয়ে আসলে খরচও পড়বে যথেষ্ট। এখানে এন্ট্রি ফ্রি। তবে উদোম গায়ে যাওয়া যায় না। বেশিরভাগ বিদেশী যেহেতু খালি গায়ে ঘুরে, তাদের জন্য গেটে ফ্রি থাই কাপড়ের ব্যবস্থা আছে। যাওয়ার সময় ফেরত দেয়া লাগে। শহরের বার্ডস আই ভিউ পাওয়ার জন্য এই জায়গাটা এক্টা মাস্ট সি স্পট৷
এখানে পার্কিং-ও ফ্রি!!!
বিগ বুদ্ধা থেকে ফিরতি পথে গেলাম এলিফ্যান্ট কিংডমে। হাতি থাইল্যান্ডের জাতীয় ক্রাশ। এলিফ্যান্ট কিংডমে ৫০০ বাথে করে হাতির পিঠে চড়ে পাহাড়ী পথে ঘুরে আসা যায়। হাতিকে খাবার খাওয়ানো, হাতির সাথে গোসল করা (হাতি শূড় দিয়ে আপ্নাকেও গোসল করিয়ে দেবে), হাতির পিঠে উঠে ছবি তোলা এই টাকার মধ্যে।

ফুকেটে একধরনের রেসিং কার আছে। ২০০ বাথে দশ মিনিটের রাইড৷ রেসিং ট্র
্যাকে রেসিং এক্সপেরিয়েন্স নিতে এটাও এক্টা মাস্ট ডু এক্টিভিটি।
থাইল্যান্ডের সব শহরেই বোধহয় টাইগার জু আছে। ফুকেটেও আছে, টাইগার কিংডম। যথারীতি বাঘের সাথে ছবি তোলা, বাঘকে দুধ খাওয়ানো, কোলে নিয়ে রাখা। বাচ্চাদের জন্য এই জায়গাটা বেসম্ভব ভালো।
সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম পাতং বীচের কাছে আমাদের হোটেলে। হোটেল আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম, ব্যাগটা শুধু রিসিপশনে রাখা ছিলো। ওটা নিয়ে ছুটলাম এয়ারপোর্টের জন্য শেয়ারড মাইক্রো'র আসন বুকিং দিতে। প্রতিজন ২০০/- বাথ। ট্যাক্সিতে গেলে ৭০০ বাথ মিনিমাম। বাসে গেলে প্রতিজন ১৫০/- বাথ। তবে লাস্ট
বাস রাত ৮ টায়। লাস্ট শেয়ারড মাইক্রোবাস ৯ টায়।
খাবার খেয়ে নয়টায় মাইক্রো-তে উঠামাত্র শুরু হলো বৃষ্টি! পাহাড়ী রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে জীপে চড়ার অতিপ্রাকৃত আবহটা এখনো মনে রয়ে গেছে!
আমাদের জীপে একজন মদ্যপ আমেরিকান ছিলো! মদ্যপ হলেও লোকটার যে হুশজ্ঞান সবই ছিলো সে এটা প্রথমে বুঝতে দেয়নি। পুরো জীপের ১১ যাত্রীকে ইচ্ছাকৃত কমেডি আচরণ করে হাসিয়ে মেরেছে!
ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে আমরা ফুকেট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এসে নামলাম। এয়ারপোর্ট খুবই গোছানো আর সুন্দর। থাই লায়নের ফ্লাইট পরদিন ভোর ছয়টায় হওয়ায় আমরা ফ্লোরেই ঘুম দিলাম।
এবার আমাদের সহযাত্রীদের বেশীরভাগ স্থানীয়। প্রায় দুই ঘন্টার এই বাজেট এয়ারলাইন্সে খাবার দেয় না। ভাড়া ৩৫০০/- বাংলা টাকা নিয়েছিল প্রতিজনের।
ব্যাংককের ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট থেকেই ফ্রি শাটল বসে চলে এলাম সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফিরতি ফ্লাইট বেলা ২ টায়। বোর্ডিং পাস নিয়ে বোর্ডিং গেটের কাছে গিয়ে হতাশ হয়ে দেখি সবাই বাঙালী! 😑
সেই চির পরিচিত ক্যাওয়াজ! বিমানে উঠেও সবাই চিৎকার চেচামেচি করতেছে। ভিড্যু কল দিয়ে পাশের লোক কামাইল্যার মা'কে বিমানের উড্ডয়ন দেখাইতেছে আর পুরা বিমান কাপায়া কামাইল্যার মা বাংলাদেশ থেকে দোয়া ইউনূস পড়তেছে যেন বিমান ঠিকঠাকমতো উড়তে পারে। ওই ভদ্রলোকের ছেলে ভিডিউতে আইসা বলতেছে, বাবা জানালার কাছে মোবাইল নেও। খেয়াল রাইখো জানালা দিয়া যেন মোবাইল পইড়া না যায়।
এদিকে এয়ারহোস্টেস মাইকে বারবার বলছে "মোবাইল বন্ধ রাখেন সবাই। আপ্নার হ্যান্ড লাগেজ মাথার ক্যাবিনে জায়গা না হলে পায়ের কাছে রাখুন। আর মাথার কেবিনে রাখতে গিয়ে আরেকজনের মাথায় ফেলবেন না! আসন পেয়ে গেলে দ্রুত বসে অন্যকে যাওয়ার সুযোগ দিন।" কে শোনে কার কথা! এক ম্যায়ে আমার পথের সাম্নে দাড়িয়ে আছে প্রায় পাচ মিনিট। আমি সরতে বললে মুখ ভেংচি দিয়ে বললো, ক্ষেত এক্টা!
আমিও আস্তে বললাম, চাষ করবেন?
© KingDH