02 December, 2019

সাদা হাতীর দেশ: থাইল্যান্ড ভ্রমণ (পর্ব - ১)

প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড ঘুরতে যাচ্ছি আনন্দ তাই একটু বেশিই। খুশিতে যাওয়ার আগের রাতে ঘুমাতেও পারিনি। এটা আমার সেকেন্ড ওভারসিস ট্যুর। তাছাড়া আমি প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দেখতে যাচ্ছি। কলকাতা, দিল্লি এবং শ্রীনগর এয়ারপোর্ট দেখার পর নিজের দেশের এয়ারপোর্ট দেখে আমি একেবারে হতাশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার পর এই হতাশা আরো বেড়েছে। বিমান টেক-অফ করার আগে রানওয়ে থেকেই আমার গা গুলাচ্ছিলো। রানওয়েতে এরকম ঝাঁকুনী! একটা দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে যেই এয়ারপোর্ট সেটারই এই অবস্থা! ইমিগ্রেশনের কাহিনী না হয় বাদই দিলাম। (এসব বলে যদিও লাভ নাই তবুও বলি কোনো একদিন যদি কর্তা ব্যক্তিদের বোধোদয় হয়!)
যাইহোক, সব বিবেচনায় Us Bangla Airlines-এর রিটার্ন টিকেট কেটেছি ১৪৯০০ টাকা করে। পনেরো দিন আগে টিকেট কাটলেই ইউএস বাংলার এই প্রাইসটা পাওয়া যাবে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারীতে এই রেটে পেতে হলে ১ মাস আগে টিকেট করতে হবে। যদিও Thai Lion Air ব্যাকপ্যাকারদের জন্য জনপ্রিয় কিন্তু তখন কোনো অফার ছিলো না এবং একমাস আগেও সর্বনিম্ন রেট পাওয়া যাচ্ছিলো না। আবার লাগেজ নিলে সব মিলিয়ে সেই ১৪০০০ এর বেশিই খরচ পড়ে যায়। যেহেতু আমরা বাজেট ট্রাভেলার তাই ইউ-এস বাংলায় সই। যদিও যাওয়ার সময় আমরা লাগেজ নেইনি কিন্তু ওখান থেকে লাগেজ কিনে আনার প্ল্যান ছিলো। ঢাকা থেকে অন্য বিমানে যাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স নাই আমার তাই সার্ভিসটা অন্যদের তুলনায় কেমন সেটা বলতে পারছি না।
ফ্লাইট ছিলো ৯:৪৫ এ। এয়ারপোর্টে যেহেতু হুট করে লম্বা লাইন শুরু হয় এবং ইমিগ্রেশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝামেলা করে তাই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে যাওয়া উচিৎ। ইমিগ্রেশনে আমার পাসপোর্ট আপডেট না থাকায় ঝামেলা করছিলো। এটা নিয়ে মেজাজ খারাপের একটা পোস্টও দিয়েছি আমি। শেষ পর্যন্ত এই ধকলটা কাটিয়ে বোর্ডিং পাস পেলাম। ইউএস বাংলা নাকি ওদের বিমান অব্দি সবসময়ই বাসে করে নিয়ে যায়। আমি লাফিয়ে যাবো কিনা এটা জিজ্ঞেস করার সময় পাশের ভদ্রমহিলা রসিকতা করে জানালেন, “ইউএস বাংলায় সবসময়ই লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে হয়”।
বিমনটা অত জমকালো না হলেও বেশ বড়সড়। যাওয়ার সময়ে ওদের খাবরটা ভালো লাগেনি কিন্তু আসার সময়ের খাবারটা চমৎকার ছিলো। বিমানে অদ্ভুত চিল্লাপাল্লা না থাকলেও প্রচুর বাংলাদেশি যে আছে এটা বোঝা যাচ্ছিলো। টেক-অফ করার সময় শরীর একটু খারাপ লাগলেও পরে ভালো লাগছিলো। আসলে আকাশভ্রমণ বেশ চমৎকার ব্যাপার যদিও আমার একটু পর থেকেই শুধু ঘুম পায়।
থাইল্যান্ড সময় ১.১০ মিনিটে বিমান টেক-অন করার সময়। সুবর্ণভূমি ল্যান্ড করার পরেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। নতুন কোন দেশ দেখাটা আমার কাছে খুবই এক্সাইটিং। রানওয়ের সেই বাজে ঝাকুনিও ছিলো না। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট দেখতে খুবই ভালো লাগছিলো। অবশ্য পরে মনে হয়েছে ডন মুইয়াং এয়ারপোর্ট বেশি সুন্দর। ইমিগ্রেশন নিয়ে আমি বরাবরই একটু উদ্বিগ্ন থাকি কারণ আমার অভিজ্ঞতা খুবই কম। কিন্তু থাই ইমিগ্রেশন খুবই দ্রুত শেষ হয়েছে এবং আমাকে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। অবশ্য আশেপাশের কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করতে দেখলাম না।
আমাদের নেক্সট ফ্লাইট ছিলো ডন মুইয়াং থেকে ক্রাবি। যেহেতু রাত সাড়ে দশটায় ফ্লাইট তাই এই সময়টা আমরা কাজে লাগাতে চাইলাম। সোজা চললাম মাদাম তুসো জাদুঘর অভিমুখে...
----------
*পরের পর্বে থাকবে সুবর্ণভুমি থেকে কোথায় কিভাবে যেতে হবে।
*এয়ার ফেয়ার সংক্রান্ত তথ্যগুলো খুঁজে খুঁজে যা পেয়েছি নিচে তা তুলে ধরলাম।
=> Biman Bangladesh Airlines –এ তিন মাস আগে টিকেট করলে ফেয়ার হবে ২৩০০০ টাকা এবং এক মাস আগে সেটা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৩০০০ টাকায়। এই ফেয়ারের সাথে খাবার ইনক্লুড থাকবে।
=>Us Bangla Airlines –এ পনেরো দিন আগে টিকেট করলেই ১৪০০০ টাকায় পাওয়া যাবে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারীতে এই রেটে পেতে হলে ১ মাস আগে টিকেট করতে হবে। এই ফেয়ারের সাথে খাবার ইনক্লুড থাকবে।
=>Thai Lion Air ঢাকা থেকে সরাসরি ব্যাংককের অন্য এয়ারপোর্ট ডন মুইয়াং যায় শুধু। যারা ক্রাবি বা ফুকেট যেতে চান তাদের জন্য Thai Lion বেস্ট চয়েস। দুই মাস আগে রেগুলার টিকেট কাটলে ভাড়া পড়বে ২৩৫০০ টাকার মতো। তবে প্রোমো অফার থাকলে ১২০০০ থেকে ১৩০০০ টাকার মধ্যেও টিকেট পাওয়া যাবে। Thai Lion কিছুদিন পর পরই প্রোমো অফার দিয়ে থাকে। তবে এই ফ্লাইট গুলোতে খাবার ইনক্লুড থাকে না, কিনে খেতে হয়।
=> Thai Airways বলা যায় থাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য একটি রয়্যাল সার্ভিস। দুই মাস আগে টিকেটের ফেয়ার হবে ৩৩০০০ টাকা এবং এক মাস আগে টিকেট কাটলে ফেয়ার ৩৮৫০০ টাকা পড়বে। এই ফেয়ারের সাথে অবশ্যই খাবার ইনক্লুড থাকবে।

***এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট কাটলে ভাড়া সবসময়ই কয়েকশত টাকা কম পড়বে।
*ব্যাগেজ এবং লাগেজ সংক্রান্ত তথ্য।
এয়ারলাইনস গুলোতে ৭ কেজি পর্যন্ত হ্যান্ডব্যাগ নেওয়া যায়। লাগেজের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পলিসি।
=> ইউএস বাংলা যাওয়ার সময় ২০ কেজি এবং আসার সময় ৩৫ কেজি পর্যন্ত এলাও করে।
=> থাই লায়নে লাগেজ নিতে হলে টিকেট করার সময় বা চেক-ইনের সময় লাগেজের জন্য বুকিং দিতে হয়। প্রতি কেজি লাগেজের জন্য ২০০ টাকা করে পে করতে হয়।
=> থাই এয়ারওয়েজ ইকোনমি ক্লাসের জন্য মেক্সিমাম ৩০ কেজি এলাও করে।
=> বাংলাদেশ বিমান ২০ কেজি করে দুইটা লাগেজ নেওয়ার অনুমতি দেয়।

No comments:

Post a Comment