11 November, 2020

সাদা হাতীর দেশ: থাইল্যান্ড ভ্রমণ (পর্ব - ৩)

(পর্ব-১ এবং ২ লিখেছিলাম এক বছর আগে। ব্যস্ততার কারণে আর লেখা হয়ে উঠেনি। প্যান্ড্যামিকের জন্য অনেক কিছুই হয়তো পরিবর্তন হয়েছে তবুও এই পোস্টের তথ্যগুলো কাজে লাগবে আশা করি।)
ক্রাবি এয়ারপোর্টে বিমান যখন টেক-অন করে তখন রাত প্রায় ১২ টা বাজে। আমরা বেশকিছু ট্যাক্সি দেখলাম ভাড়া অনেক বেশি ছিলো। তবে এটা আমরা আগেই জানতাম তাই এয়ারপোর্টেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। তবে আপনারা যারা রাতে এয়ারপোর্টে থাকতে চান, বাইরের আবহাওয়া যাই হোক শীতের কাপড় অবশ্যই সাথে রাখবেন। ক্রাবি এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যশনাল হলেও খুব ছোট, ঘুরাঘুরির জায়গা তেমন নাই। 

এয়ারপোর্টের বাইরে খাবারের দোকান আছে দুইটা। বিভিন্ন রকমের খাবার কিন্তু সব খাবারেই সম্ভবত কারি পাতা দেওয়া থাকে। এটার ঘ্রাণ আমি সহ্য করতে পারতাম না। এইজন্য বাকি দিন গুলোতে আমি সবচেয়ে বেশি খেয়েছি কফি, জুস এবং বিভিন্ন রকমের ফল। হাতে বেশি সময় থাকলে এই ফ্লাইটে না গেলেই ভালো অথবা গেলেও হোটেলে গিয়ে থাকা উচিৎ। সেক্ষেত্রে আপনি পরেরদিন ফি ফি আইল্যান্ডে যেতে পারেন। কারণ ক্রাবিতেও দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। 

ক্রাবি এয়ারপোর্ট থেকে ক্রাবি শহর প্রর্যন্ত সাটল বাস ভাড়া ৯০ বাথ, শেয়ার জিপে ২০০ বাথ। ক্রাবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা Ao Nang বীচ পর্যন্ত শেয়ার জিপে ২৫০ বাথ এবং বাসে গেলে ১৫০ বাথ। অ-নাং বীচের আশেপাশে কম খরচে ভালো হোটেল এবং খাবার পাওয়া যায়। 

রাতে শীত মশা এবং ক্ষুধায় ঘুম না হওয়ার কারণে বাসে উঠেই সে কি ঘুম! একেবারে টেনে টেনে বাস থেকে নামতে হয়েছিলো তাই আমি পথে কিছুই দেখিনি বলা যায়। বাস থেকে নেমেই হাটাহাটি শুরু করলাম একেবারে শান্ত প্রায় শহরটাতে। দোকানপাট তখনও সব খোলেনি। এরকম সুনসান জায়গা দারুণ লাগে আমার। সেভেন ইলেভেনের শপ থেকে কফি নিয়ে সিঁড়িতে বসে চারিদিক ভালোমতো দেখলাম। ক্রাবি মুসলিম অধ্যুষিত তাই যারা হালাল খাবার নিয়ে টেনশন করেন তারা নির্দ্বিধায় খাওয়া দাওয়া করতে পারেন। এবং ফি ফি আইল্যান্ডে যাওয়ার সময় অবশ্যই ক্রাবি থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবেন। 

ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু বুথ পাওয়া গেলো ফেরী/ইয়টের টিকেট কাটার জন্য। ক্রাবি থেকে ফি ফি আইল্যান্ড যাওয়ার টিকেট পার পারসন ৩৫০ বাথ। তবে Krabi Pier থেকে টিকেট নিলে ৩০০ বাথেও পাওয়া যাবে। আমাদের ফেরী ছাড়ার সময় ছিলো ১টা এবং রিপোর্টিং টাইম ছিলো ১২টা। এই সময়টা মেইন্টেইন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নইলে আপনাকে ফেলে রেখে চলে যাবে যদি একটু দেরি করেন। 

এই সময়টার মধ্যে আমাদের প্ল্যান ছিলো অ-নাং বীচ সহ ক্রাবি শররটা ঘুরে দেখার। আপনি যদি বাইক চালাতে জানেন তাহলে এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্কুটার সবচেয়ে সাশ্রয়ী। ২০০ বাথ দিয়ে সারাদিনের জন্য স্কুটার ভাড়া পাওয়া যাবে। সব জায়গাতেই দরদাম করার সুযোগ আছে তবে এরা আপনাকে ঠকাবে না। দরদাম করলে কমবেশি ৫০ বাথ অব্দি অনার পাবেন। স্কুটার ভাড়ার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স চায় তবে আপনার লাইসেন্স না থাকলেও দেবে কিন্তু সেটা আপনার জন্য রিস্কি হয়ে যাবে হয়তো। স্কুটারের জন্য আপনাকে আরো ৫০ বাথ খরচ করতে হবে তেল/গাসোলিন নিতে। তবে ওখানে ওরা গ্যাস বা গাসোলিন বলে যেটার দাম প্রতি লিটার ৩০ বাথের চেয়ে কিছু কম। ৪০ বাথ লিটার বোতলে করেও অনেক দোকানে বিক্রি করে। এই তেল খুব কম খরচ হয়, দেড় থেকে দুই লিটারে অনেক অনেক মাইল ঘুরাঘুরি করা যায় কারণ তেল একেবারে পিওর থাকে। আর একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বাইক চালাতে পারলে স্কুটার চালানো যায় খুব সহজে তবে চালানোর আগে বেসিক জিনিসগুলো মালিকের কাছ থেকে ভালো করে শিখে নেবেন। 



অনাং যাওয়ার পথে অখ্যাত কিছু স্পট রয়েছে। আরো রয়েছে রাস্তার পাশে খাঁড়া পাহাড়। সম্ভবত পাথুরে পাহাড়। এসব পাহাড়ে ক্লাইম্বিং করা যায়। পথের ভিউ চমৎকার। অনাং বীচে পৌঁছুতে আধা ঘন্টারও কম সময় লাগে। এই জায়গাটা ট্যুরিস্টদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। ক্রাবি শহরের নিস্তব্ধতা এখানে নাই। রাস্তার দু-পাশ ধরেই বিভন্ন ধরনের খাবার এবং বীচে পরার উপযোগী কাপড় চোপড়ের দোকান। 

ক্রাবির বিখ্যাত বীচের মধ্যে রয়েছে এই অ-নাং এবং রেইলে। অনাং বীচে গিয়ে ৫০ বাথে লং টেইল নৌকায় দশ মিনিটে পৌঁছানো যায় রেইলে বীচে। দেখতে খুবই সুন্দর এই বিচ দুটি। 

ক্রাবি নদীর তীরে অবস্থিত ক্রাবি শহর। নদীর তীর ঘেষেই রয়েছে দর্শনীয় Mud Crab Sculpture যেটা কিনা বৃহৎ একটা কাঁকড়ার ভাস্কর্য। অবশ্য নাম শুনেই সেটা বোঝা যায়। এছাড়াও ক্রাবি শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চমৎকার এমারেল্ড পুল! কাছেই আছে গরম পানির ঝর্ণা যেতার প্রবেশ মূল্য ২০০ থাই বাথ। পুল সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে সাটল বাস নেই, স্কুটার বা অন্য কোনোভাবে যেতে হবে। "ফ্লাই এন্ড জাম্প" নামে ক্রাবি শহরে আরেকটা প্রসিদ্ধ সুইমিং পুল আছে। এটাতে এন্ট্রি ফি ৩০০/- বাথ। শহরের কাছেই আছে টাইগার কেভ। ১২’শয়ের অধিক সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উপড়ে উওথলে পুরো ক্রাবি শহরটা দেখতে পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সোনা রঙের বুদ্ধমুর্তি। 

খাবার দাবার সহ প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য *সেভেন ইলেভেন শপ বেছে নিতে পারেন। এরকম আরো কিছু সুপার শপ রয়েছে সেখানে যখন তখন রেডি ফুড পাবেন। প্রয়োজনীয় পোশাক রাস্তার পাশেই পাবেন। দিনে খুব কড়া রোদ পড়ে তাই সাথে সানগ্লাস, হ্যাট এবং আরামদায়ক পোশাক রাখবেন। সানস্ক্রিন ক্রিমও রাখতে পারেন বাড়তি প্রোটেকশন হিসেবে। আমার কাছে কিছুই ছিলো না। ফুকেট আসতে আসতে মুখের ত্বক পুড়ে শেষ। 

ঘুরাঘুরি শেষে স্কুটার জমা দিয়ে টিকেট কাটা বুথে ফিরে গেলাম। পথে এক দোকানের পাশে বসে আয়েস করে কোল্ড ড্রিংস খাচ্ছিলাম। এই আলসেমির কারণে ৮ মিনিট লেট হয়েছিলো। এরমধ্যে আমাদের গাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। পরবর্তী গাড়ি আসার জন্য ৫ মিনিট অপেক্ষা করলাম। বুথের ভদ্রমহিলা ভীষণ আন্তরিক। 

এই সময়টার মধ্যে আমি ঘুরে ঘুরে স্ট্রিট ফুড দেখছিলাম। যাওয়ার আগে সাথে খাবার নিয়ে নিলাম ৪০ বাথ দিয়ে। কেমন যেন ছোট ছোট টুকরা করা বিফ, শব্জি এবং ভাত। তারপর গাড়িতে করে ছুটলাম Krabi Pier অভিমুখে।

No comments:

Post a Comment